Home / মতামত / ডানপন্থী নিয়ে বিএনপির বয়ানের রাজনীতি

ডানপন্থী নিয়ে বিএনপির বয়ানের রাজনীতি

বিশ্বের বেশ কয়েকটি বড় বা ক্ষমতাধর রাষ্ট্রে উগ্র ডানপন্থী বা দক্ষিণপন্থীদের ব্যাপক উত্থান দেখা যাচ্ছে৷ মা যুক্তরাষ্ট্র,জার্মানি, ভারত এর মধ্যে অন্যতম৷ ইউরোপের আরো কয়েকটি দেশের অবস্থাও একই৷ ফলে ডানপন্থীদের উত্থানের বিষয়টি বৈশ্বিক ব্যাপার৷

আমাদের দেশে বয়ান তৈরির রাজনীতিতে এই বিষয়টিকে এখন সামনে আনার তীব্র চেষ্টা দেখা যাচ্ছে৷ দুই যুগেরও বেশি সময় বিএনপির সঙ্গে যুক্ত ছিল জামায়াতে ইসলামী৷ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগ অবধি তাদের অবস্থা ছিল এ ‘বান্ধন কাভি টুটেগা নেহি’ মানে এ বাঁধন কখনো ছেঁড়ার নয় আর কী! 

কিন্তু পাঁচ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতিতে রাতারাতি তারা হয়ে গেছে একে অপরের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ৷ ফলে বিএনপিবিএনপির মুখে ডানপন্থী, ইসলামপন্থী ইত্যাদি নানা শব্দ অহরহ শোনা যাচ্ছে৷ 

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বিএনপি এখন আওয়ামী লীগের শূণ্যস্থান পূরণে উদ্যোগী বেশি৷ অনেক আগে থেকেই একটা কথা চাউর আছে যে, বিএনপির আসলে নিজস্ব রাজনীতি বা আদর্শ বলে কিছু নেই৷ এন্টিআওয়ামী লীগ একটা ফোর্স বাংলাদেশে থাকা দরকার বলে বিএনপি এখনও টিকে আছে৷ আর এই দলে সুবিধাবাদী লোকের সংখ্যাই বেশি৷ আদর্শিক অবস্থান নেই বলে দলের ভিত্তি মজবুত নয়৷ তারা দেড় দশক ধরে জামায়াতের সঙ্গ ধরে রাখতে পারলেও একটা শক্ত আন্দোলন করে আওয়ামী লীগের ভিত্তি কাঁপাতে পারেনি৷  

বিএনপি আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে শেখে প্রচুর৷ এখন জামায়াত আর এনসিপিকে যুক্ত করে যে ট্যাগের রাজনীতি বিএনপি করতে চাচ্ছে সেটা আওয়ামী লীগ গত দেড় দশক বিএনপি ও জামায়াতকে নিয়ে করেছে৷ বিএনপি সেটা সামলাতে পারেনি৷ তাদের ধারনা সম্ভবত জামায়াত আর এনসিপিও পারবে না৷ 

বিএনপির এই হিসেব ঝুঁকিপূর্ণ৷ শেখ হাসিনার পতনের আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা নিজেদেরকে ‘‘রাজাকার’’ ঘোষণা দিয়ে জীবন হাতে নিয়ে রাজপথে নেমেছিলেন৷ ফলে বিএনপি যেটা দেড় দশকে পারেনি সেটা শিক্ষার্থীরা ৩৬ দিনেই পেরেছিলেন কারণ আওয়ামী লীগের তৈরি বয়ান দিয়েই আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করে দিয়েছেন তারা৷   

আমাদের রাজনীতিতে নৈতিকতা কম, ক্ষমতায় যাওয়ার লোভ বেশি৷ জার্মানির কথা তাই এখানে আরেকটু বলতে হয়৷ অতীত থেকে শিক্ষা নেয়া জার্মানির সবচেয়ে বড় দুটো দল মাঝেমাঝেই জোট গড়ে রাষ্ট্র চালায়৷ কারণ তাদের কাছে রাষ্ট্র, জনগণের স্বার্থ বেশি গুরুত্বপূর্ণ এককভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার বাসনার চেয়ে৷ অথচ গত বেশ কয়েকবছর ধরে জার্মানিতে এএফডি নামের অভিবাসী এবং ইসলামবিরোধী উগ্রডানপন্থি একটি দলের সমর্থন বাড়ছে৷ এখন জার্মানির সংসদে প্রধান বিরোধী দলটি৷ চাইলেই বড় দল দুটোর কোনো একটি এএফডিকে নিয়ে নিজেদের মতো করে সরকার গড়তে পারতো৷ কিন্তু এই দুটো দলের নীতি হচ্ছে উগ্র বাম বা উগ্র ডান কোনপক্ষের সঙ্গেই জোট গড়বে না তারা৷ ফলে গড়ে না৷ 

একাত্তরে জামায়াতে ইসলামীর ভূমিকা নিয়ে নানা কথা বলার সুযোগ ছিল, আছে, থাকবে৷ একাত্তরের প্রশ্ন জামায়াতকে কোনো না কোনোদিন মিমাংসা করতে হবে৷ এটা বাস্তবতা৷ কিন্তু ‘‘মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে’’ ধারণ করে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ বা দুটো দলই যদি ঘোষণা দিত তারা জামায়াতের সঙ্গে কখনো জোট গড়বে না তাহলে সেটা একটা উদাহরণ হতে পারতো৷ 

দল দুটো কখনোই সেটা বলেনি৷ বরং জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়ে বা দূরে রেখে দলটিকে নিয়ে রাজনীতিতেই আগ্রহ তাদের৷ কিন্তু জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে উগ্রবাদ বা উগ্রডানপন্থাকে যুক্ত করার যে চেষ্টা অতীতে আওয়ামী লীগ বা এখন বিএনপি করে সেটা ধোপে টেকে না কারণ বাস্তবতার সঙ্গে বিষয়টি যায় না৷ জামায়াতের অতীত ইতিহাস তা বলে না৷ বরং তারা সরকারে যখন যেটুকু ভূমিকা রাখার সুযোগ পেয়েছে সেটা মানুষের স্বার্থে ভালোই কাজে লাগিয়েছে৷ জামায়াতের নিজস্ব আদর্শ আছে, অনুগত ভোটার আছে এবং তীব্র বিরুপ পরিবেশে টিকে থাকার অভিজ্ঞতা আছে৷   

বিএনপির উচিত সস্তা সুড়সুড়ির রাজনীতি থেকে বেরিয়ে এসে নিজেদের একটা আদর্শ, নীতি গড়ায় মন দেয়া৷ এরকম ভাসমান হয়ে শুধু আওয়ামীলীগ বিরোধী রাজনীতি করে সামনে আগানো কঠিন হবে দলটির জন্য৷ কারণ আওয়ামীলীগ বিরোধী রাজনীতিতে এনসিপি ইতোমধ্যে হাত পাকাতে শুরু করেছে৷ অন্যদিকে, বাংলাদেশের মডারেট মুসলমান ভোটারদের যে বড় একটা অংশ বিএনপিকে ভোট দিত তারা যদি জামায়াত এবং অন্যান্য ইসলামিক দলের দিকে ঝোঁকে তাহলে বিএনপির ‘আমও গেছে, ছালাও গেছে’ অবস্থা হতে পারে৷

Tagged: