Home / মতামত / দাড়ি, টুপি, হিজাব আর ইসলামফোবিয়ার বয়ান

দাড়ি, টুপি, হিজাব আর ইসলামফোবিয়ার বয়ান

ইসলামোফোবিয়া পশ্চিমা সমাজে বেশ আলোচিত একটি শব্দ৷ এর সহজ অর্থ হচ্ছে ইসলামকে ভয় করা, অথবা ইসলাম বা মুসলমানদের ‘প্রতি বিদ্বেষ’ পোষণ করা৷ বিশ্বের নানা দেশে এটা এক ইস্যু৷

ইসলামোফোবিয়া দূর করতে নানা রকম উদ্যোগ রয়েছে পশ্চিমে৷ তাসত্ত্বেও উগ্র ডানপন্থি রাজনীতি ইসলামোফোবিয়া সৃষ্টির, ধরে রাখার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে৷ ফলে মাঝেমাঝেই দেখা যায়, কোনো অপরাধের সঙ্গে যদি কোনো মুসলমান যুক্ত থাকেন তাহলে সেটাকে ফলাও করে প্রচার করা হয়৷ কিন্তু একই ধরনের অপরাধ অন্য ধর্মের কেউ করলে সেটা এড়িয়ে যাওয়া হয়৷

আমাদের দক্ষিণ এশিয়ায় বিশেষ করে ভারতের ক্ষমতাসীন উগ্র হিন্দুত্ববাদী হল বিজেপির অনেক নেতার বিরুদ্ধে ইসলামোফোবিয়া উস্কে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে৷ তাদের এই চেষ্টার ফলে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমানদের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতার কথা শোনা যায় এবং সমাজে একধরনের বিভেদ তৈরি হচ্ছে যা বিজেপির ডানপন্থি রাজনীতির জন্য সহায়ক৷

বাংলাদেশ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র হলেও ইসলামোফোবিয়া এই দেশেও রয়েছে৷ বিশেষ করে গত ১৫ বছর ধরে বিরোধী দল, মতকে দমনে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগের অনেকে ইসলামোফোবিয়া উস্কে দিয়েছেন৷ যেকোনো ধরনের উগ্রপন্থার সঙ্গে বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতাকর্মীদের জড়িয়ে তাদের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার করার অভিযোগ রয়েছে৷

দেখা গেছে, যে ইসলামী গোষ্ঠীগুলো শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী শাসনকে মেনে নিয়েছে বা সমর্থন করেছে তাদেরকে নানা সুযোগ সুবিধা দেয়া হয়েছে, কিন্তু যারা তা করেনি তাদের কপালে জুটেছে ‘জঙ্গি, সন্ত্রাসী’ তকমা৷

শেখ হাসিনা আসল জঙ্গিবাদকে অস্বীকার করে শুধুমাত্র ভিন্নমতকে ‘জঙ্গি, সন্ত্রাসী’ আখ্যা দিয়ে দমনের চেষ্টার ফলাফল কত ভয়াবহ হতে পারে তার নমুনাও আমরা দেখেছি৷ ২০১৬ সালের ১ জুলাই ঢাকার হোলি আর্টিজানে সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণ হারান বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিক৷ বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা ছিল সেটি৷

কিন্তু ইসলামোফোবিয়াকেন্দ্রিক বয়ানের রাজনীতি তৈরি করে সেই হামলা ঠেকানোর ব্যর্থতা ঢেকে দিতে সক্ষম হয় হাসিনা সরকার৷ বরং হলি আর্টিজানের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরুদ্ধমত দমনে আরো বেশি শক্তি প্রয়োগের সুযোগ করে নেন তিনি৷ দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী বা হিজাব পরা ভিন্নমতাবলম্বীরা তার দল এবং তার অনুগত নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে নির্যাতন, নিপীড়নের শিকার হয়েছেন অনেক৷

গত পাঁচ আগস্টের পর পরিস্থিতি বদলেছে৷ একসময় তীব্র চাপে থাকা রাজনৈতিক দলগুলোর পাশাপাশি দাড়ি, টুপি, পাঞ্জাবী বা হিজাব পরা মানুষরাও ক্রমশ সমাজের সর্বত্র নিজেদের প্রকাশ করতে পারছেন৷ মিছিল, মিটিং, আলোচনায় তাদের সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে৷ ফলে পোশাককেন্দ্রিক যে ইসলামোফোবিয়া বা বয়ানের রাজনীতি গত সরকার করেছিল তা কাটতে শুরু করেছে বলা যায়৷

কিন্তু আওয়ামী লীগের যে সুশীল অংশ এখনো বহাল তবিয়তে টিকে আছে তারা তাদের অপচেষ্টা থামায়নি৷ বিশেষ করে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপিতে দাড়ি, টুপি কিংবা হিজাব পরা কর্মী, সমর্থক, নেতাদের দেখিয়ে ইসলামোফোবিয়া জাগ্রত করার চেষ্টা তারা অব্যাহত রেখেছেন৷ তারা ছোট ছোট সামাজিক, নৈতিক ইস্যু যা অতীতেও ছিল সেগুলোকে সামনে এনে বড় করে ইসলাম ধর্মের প্রতি একধরনের বিরুপ মনোভাব তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ এদের বিষয়ে সতর্ক হওয়া জরুরী৷

Tagged: