সম্প্রতি দেশের এবং ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে সিন্ধু নদীতে ভারতের বাঁধ নির্মাণ নিয়ে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ডমার্শাল আসিম মুনিরের উদ্বিৃতি দিয়ে বলা হচ্ছে যে তিনি বলেছেন ভারতের বাঁধ বানানো শেষ হলে পাকিস্তান “১০টি মিসাইল মেরে” সেটি ধ্বংস করে দেবে।
এই সংক্রান্ত দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ আছে এখানে, এখানে, এখানে, এখানে, এখানে এবং এখানে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত সংবাদের মূল উৎস খোঁজার চেষ্টা করে ইনসাইড রিউমারস৷ তবে এই সংক্রান্ত কোনো ভিডিও ফুটেজের সন্ধান পায়নি ইনসাইড রিউমারস।
আলোচিত দাবির ক্ষেত্রে রোববার দ্যা প্রিন্ট নামে ভারতীয় একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমে একটি সংবাদ পাওয়া যায়। অন্যদিকে সোমবার টাইমস অব ইন্ডিয়া, হিন্দুস্তান টাইমস, দ্যা ইকোনমিক টাইমস-সহ ভারতীয় একাধিক গণমাধ্যমে একই দাবি করা হয়৷ তবে সেখানে কোনো সূত্রের উল্লেখ পাওয়া যায়নি৷
দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত এই সংক্রান্ত সংবাদের সূত্র অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা পোস্ট সংবাদের ক্ষেত্রে দ্যা প্রিন্ট নামে ভারতীয় ওই অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সূত্র ব্যবহার করে৷ অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রতিদিন ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস-কে সূত্র হিসেবে উল্লেখ করে৷
ইনসাইড রিউমারস দ্যা প্রিন্টে গত রোববার প্রকাশিত ওই সংবাদটি বিশ্লেষণ করেছে৷ এতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার টাম্পায় পাকিস্তানের কনসাল আদনান আসাদের আয়োজিত এক ডিনার অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান ফিল্ডমার্শাল আসিম মুনির আলোচিত মন্তব্যটি করেন৷
আসিম মুনিরকে কোট করে সংবাদে বলা হয়,“ভারতের বাঁধ নির্মাণ করার জন্য আমরা অপেক্ষা করবো, আর যখন তারা তা করবে, ফির টেন মিসাইল সে ফারিগ কর দেনগে (এই অংশটুকু উর্দুতে)।”
তবে সংবাদের একাংশে দ্যা প্রিন্ট উল্লেখ করে,‘অনুষ্ঠানে অতিথিদের মোবাইল ফোন বা কোনো ডিজিটাল ডিভাইস বহনের অনুমতি ছিল না এবং বক্তৃতার কোনো লিখিত কপি বিতরণ করা হয়নি। তাই দ্য প্রিন্ট অনুষ্ঠানে উপস্থিত কয়েকজন অংশগ্রহণকারীর স্মৃতিচারণ থেকে বক্তব্যটি পুনরায় তৈরি করা হয়েছে।’
পাকিস্তানের বিখ্যাত সংবাদসংস্থা ‘ডন’ সিন্ধু নদীতে ভারতের বাঁধ নির্মাণ নিয়ে সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের মন্তব্য নিয়ে একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে। তবে সংবাদে “১০টি মিসাইল মেরে বাঁধ ধ্বংস করে দেওয়া” সংক্রান্ত কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি৷ ওই সংবাদে সেনাপ্রধান আসিম মুনির বলেন,“আমরা ভারতের বাঁধ নির্মাণের জন্য অপেক্ষা করব, আর যখন তারা তা করবে, আমরা সেটি ধ্বংস করে দেব। সিন্ধু নদ ভারতের পারিবারিক সম্পত্তি নয়। নদী আটকানোর ভারতীয় পরিকল্পনা ভেস্তে দিতে আমাদের সম্পদের কোনো অভাব নেই।”
অর্থাৎ, এখানেও ‘মিসাইল’ শব্দের কোনো ব্যবহার দেখা যায়নি৷
সুতরাং, সার্বিক অনুসন্ধান থেকে বিষয়টি স্পষ্ট যে, দ্যা প্রিন্টে প্রকাশিত সংবাদকে সূত্র ধরে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের প্রচারিত মন্তব্যটি পুরোপুরি সঠিক নয়। সংবাদটি উপস্থিত অতিথিদের স্মৃতিচারণের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে৷
আসিম মুনিরের বক্তব্যে ভারতের বাঁধ ধ্বংস করার কথা থাকলেও “১০টি মিসাইল” নামক কোনো শব্দবন্ধের নির্ভরযোগ্য প্রমাণ পায়নি ইনসাইড রিউমারস।