আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তাদের সিআরআই নামের এক সংস্থা বেশ সরব ছিল৷ সেই সংস্থার কাজই ছিল আওয়ামী লীগের পক্ষে তিলকে তাল করা আর বিপক্ষে কিছু গেলে সেটাকে মিথ্যা বয়ান দিয়ে ঢেকে দেয়া৷ অভিযোগ আছে দেশের নামিদামি সাংবাদিক, মতমোড়লসহ অনেকেই সিআরআই থেকে নিয়মিত মাসহারা পেতেন আওয়ামী লীগের পক্ষে সাফাই গাওয়ার শর্তে৷
সেই সময় বদলেছে৷ এখন আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় নেই৷ শুধু তাই নয়, গোটা দেশের বাস্তব জগত থেকে তারা উধাও৷ তাদের দুয়েকজন নেতাকর্মী যারা একটু কথা বলেন তারাও বিদেশে লুকিয়ে আছেন৷ দেশে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া দায় এখন৷
কিন্তু অনলাইনে তাদের ব্যাপক দাপট৷ কখনো বট একাউন্ট, কখনো ফেক আইডি, কখনো বা প্রোফাইল লক করে সুযোগ পেলেই নানা পোস্টের নিচে ঝাপিয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে তাদের৷
এই অনলাইন বটদের বক্তব্য ঘুরিয়ে ফিরিয়ে একই৷ জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান, অনেকের বিবেচনায় যেটা বিপ্লবও, আসলে ‘‘ষড়যন্ত্র যেখানে বিদেশিদের ইন্ধন আছে’’৷ আর এত যে প্রাণহানি হলো অভ্যুত্থানে অংশ নেয়াদের, সেটাও তারা স্বীকার করতে রাজি নয়৷ বরং নানা ধরনের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দিয়ে সেসব প্রাণহানিও অস্বীকার করতে চাচ্ছে৷
আগামী নির্বাচন ঘিরে এই অনলাইন বটদের কথা হচ্ছে আওয়ামী লীগ সুযোগ পেলে বিপুল ভোটে জিতবে৷ অথচ এই আওয়ামী লীগই গত তিনটি নির্বাচনে সাধারণ মানুষকে ভোট দেয়ার সুযোগ দেয়নি৷ যদি দিত তাহলে আর যাই হোক এখন শেখ হাসিনাসহ সব বড় নেতাদের ভারতে পালাতে হতো না৷
এই ভারতে পালানোটাকে আবার তারা তুলনা করে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের সঙ্গে৷ মানে আওয়ামী সুশীলরা জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে ‘দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ’ মানতে নারাজ হলেও সে দলের পালিয়ে থাকা নেতারা ঠিকই মুক্তিযুদ্ধের পরিস্থিতি দেখতে পাচ্ছেন৷
সব মিলিয়ে আওয়ামী লীগ আর তাদের সমর্থকরা এক বোকার স্বর্গে আছেন মনে হচ্ছে৷ সেই স্বর্গের সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই৷ তাই হাতে রক্তের দাগ নিয়েও তারা দিব্যি গেয়ে যান মানবতার গান৷
আওয়ামী লীগের এই যে অস্বীকার করার রাজনীতি, মিথ্যা বয়ান দিয়ে শত শত মানুষ হত্যার দায় এড়ানোর তুমুল প্রয়াস, এসব দলটিকে আরো ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাবে৷ এটা কি তারা সত্যিই বোঝে না?