Home / মতামত / এক রাতে ১২ হাজার কিউবিক ফিট পাথর ফেরত; চাইলেই আমরা পারি, শুধু চাই না

এক রাতে ১২ হাজার কিউবিক ফিট পাথর ফেরত; চাইলেই আমরা পারি, শুধু চাই না

সিলেটে যারা গিয়েছেন সবার কাছে সাদাপাথর একটা খুব পরিচিত নাম। সিলেট থেকে অটোতে চড়ে রাতারগুল পার হয়ে আর কিছুদূর গেলেই ভারতের মেঘালয় আর বাংলাদেশের সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা ভোলাগঞ্জ ইউনিয়ন। আর সেই ভোলাগঞ্জে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা এই সাদাপাথর।

সাদাপাথরের জন্ম হয়েছে ভারতের মেঘালয়ে পাহাড়ি ঝর্ণাগুলো থেকে তৈরি হওয়া ধলাই নদের মাধ্যমে, যেটা ভোলাগঞ্জের উপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে। পাহাড় থেকে ঝর্ণার পানির স্রোতে এই নদী বেয়ে প্রতিনিয়তই সাদা পাথর নেমে আসে।

আর এই সাদাপাথরকে নিয়ে মাত্র চব্বিশ ঘন্টায় বিশাল দুইটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে।

বুধবার সকালে হঠাৎ করেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবর ছড়ালো যে সাদাপাথরে তেমন কোনো পাথর আর অবশিষ্ট নেই। বেশিরভাগই চুরি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দিনভর এটা নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলো। হাইকোর্টে পিটিশন পর্যন্ত হলো।

বৃহস্পতিবার সকালেই আবার আমরা খবর পেলাম চুরি হওয়া প্রায় ১২ হাজার কিউবিক ফিট পাথর আবার সাদাপাথরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, বুধবার সকালেই শুরু হয় পাথর উদ্ধারের এই অভিযান। কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা কর্তৃপক্ষ আর যৌথ বাহিনীর এই অভিযানে ভোলাগঞ্জের অদূরে থাকা কলাগঞ্জে ইউনিয়নের পাথর ভাঙ্গার সব যন্ত্রের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। তারপর সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত এই ১২,০০০ কিউবিক ফিট পাথর উদ্ধার করা হয়।

তারপর রাতের মধ্যেই সেগুলোকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় সাদাপাথরে।

এখানে বলে রাখা ভালো, বিপুলসংখ্যক এই পাথর একদিনে উদ্ধার হলেও সাদাপাথর থেকে পাথর চুরি কিন্তু একদিনে হয়নি। বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৩ এপ্রিল থেকে এই চুরির শুরু হয়। মঙ্গলবার পর্যন্ত প্রায় ৮০% শতাংশ পাথর উধাও হয়ে যাবার পর বুধবার সেটা নিয়ে প্রতিবেদন হয় আর প্রশাসনের টনক নড়ে।

আবার দৈনিক যূগান্তরের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত লুট হয়েছে প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখ ঘনফুট পাথর। ইনসাইড রিউমারস এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি কারণ যূগান্তরের প্রতিবেদনে বিবিসির বাইলাইন দেওয়া থাকলেও বিবিসির প্রতিবেদনে লুট হওয়া পাথরের পরিমাণ উল্লেখ করা নেই।

সাদাপাথরে ঠিক কী পরিমাণে পাথর মজুদ থাকে, সরকারি হিসাব ছাড়া সেটা নির্ণয় করা প্রায় অসম্ভব একটি কাজ। কারণ এখানে পাথর আসে ঝর্ণার পানির স্রোতের সাথে।

তবে সেই পরিমাণটা যাই হোক না কেন, যুক্তি বলে স্রোতের সাথে সাথে পাথর ভেসে আসায় এই এলাকায় প্রতিদিন পাথরের সংখ্যা বাড়া উচিত। কমলে ধরে নিতে হবে সেগুলো লুট করা হচ্ছে।

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, সব ভালো তার শেষ ভালো যার। শেষমেষ লুট হওয়া পাথরগুলো ফেরত আনার যে প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে, সেটা অব্যাহত থাকলে হয়তো অচিরেই প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটকের উপস্থিতিতে মূখর থাকা সাদাপাথর তার পুরনো রূপ ফিরে পাবে।

এই পুরো বিষয়টা আমাদেরকে এটাও মনে করিয়ে দেয় যে আমাদের আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থাকে আমরা যতটা ভঙ্গুর মনে করি, এটা ততোটা ভঙ্গুরও না। আমাদের সবই আছে। শুধু দূর্নীতি আর ইচ্ছাশক্তির অভাবেই আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কোনো পদক্ষেপ নেই না।

আমরা আশা করছি সাদাপাথর এবং তার আশেপাশের এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়মিত টহল অব্যাহত রাখবে, যাতে করে নতুন করে আবার পাথর চুরির ঘটনা না ঘটে। পাশাপাশি চুরি হওয়া পাথর উদ্ধারের কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে হবে।

Tagged: