সম্প্রতি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্টে শেয়ার করা হচ্ছে যেখানে দাবি করা হচ্ছে, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর সাম্প্রতিক হামলায় একাধিক মন্দির ভাঙচুর, ঘরবাড়ি লুটপাট এবং শতাধিক মানুষ আতঙ্কে গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
পোস্টে যুক্ত ছবিগুলো ব্যবহার করে বলা হচ্ছে, এই হামলা ঘটেছে এ বছরের আগস্ট মাসে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। দাবিতে থাকা তথ্যের বিষয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে “Goutam Halder Pranto” নামক এক ব্যক্তির ফেসবুকে ২০২১ সালের ৭ আগস্ট প্রচারিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত ছবিগুলোর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর সাথে স্পষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
গৌতম হালদার নামক ব্যক্তির ফেসবুক পেজ পর্যালোচনা করে জানা যায়, বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু যুব মহাজোটের নির্বাহী সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ২০২১ সালের প্রকাশিত তার পোস্টে ওই সময়কার হামলার বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। সেখানে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), স্থানীয় পুলিশ কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের ফোন নম্বর শেয়ার করা হয়েছিল। একই সঙ্গে হামলার ফলে সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতির কয়েকটি ছবিও পোস্টটিতে যুক্ত ছিল, যা সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলোর সঙ্গে মিলে যায়।
এর সূত্র ধরে আরও অনুসন্ধানে “Advocate Dr. Gobinda Chandra Pramanik” নামক এক ব্যক্তির এক্স একাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০২১ সালের ৭ আগস্ট একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। অ্যাডভোকেট ড. গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক এর এক্স একাউন্ট পর্যালোচনা করে জানা যায়, তিনি বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোট এর জেনারেল। তার পোস্টে যুক্ত ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টের ছবির সাথে মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত পোস্টের ক্যাপশনে বলা হয়, ২০২১ সালের ৮ আগস্ট বিকেল ৩টা থেকে ৫টার মধ্যে খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার শিয়ালী গ্রামের মাল্লিকপাড়া এলাকায় হামলার ঘটনা ঘটে। হামলাকারীরা পুরো গ্রাম আক্রমণ করে ৪টি বড় মন্দিরসহ মোট ১০টি মন্দির ভাঙচুর করে, প্রতিমা গুঁড়িয়ে দেয় এবং অন্তত ৫৭টি বাড়িঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এমনকি গবাদি পশুও লুট করে নিয়ে যায়।
অর্থাৎ আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো এবং ঘটনাটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়, বরং ২০২১ সালের।
বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে সাম্প্রতিক সময়ে খুলনার শিয়ালী গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার কোনো তথ্য কিংবা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে অনুসন্ধানে,‘OpIndia’ নামক ভারতভিত্তিক অনলাইন মিডিয়া ও মত প্রকাশের প্লাটফর্মে ২০২১ সালের ২ ডিসেম্বর “Twitter user shares images of attack on a Hindu temple in Bangladesh, Bengal police flags it as ‘violation of Indian law” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ছবি শেয়ার করা হয় যেখানে বাংলাদেশে একটি হিন্দু মন্দিরে হামলার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। পরে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি বিশেষ ইউনিট সেই টুইটটিকে “ভারতের আইন লঙ্ঘন” হিসেবে চিহ্নিত করে এবং টুইটারকে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুরোধ করে। OpIndia তখন অনুসন্ধান করে নিশ্চিত করে যে, ভাইরাল ছবিগুলো সত্যিই বাংলাদেশে সংঘটিত হামলার দৃশ্য এবং পূর্বে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছিল, যা প্রমাণ করে ছবিগুলো সাম্প্রতিক ঘটনা নয় বরং পুরনো ঘটনার।
এছাড়া, বিবিসি নিউজের বাংলা সংস্করণে ২০২১ সালের ৯ আগস্ট “খুলনায় ভাঙচুরের ঘটনায় থমথমে পরিস্থিতি, ক্ষতিপূরণের আশ্বাস, গ্রেফতার বেড়ে ১১” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরও একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়, এবং প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথেও আলোচিত দাবিতে যুক্ত ছবির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণ করে এটি স্পষ্ট যে, খুলনায় শিয়ালী গ্রামে সাম্প্রদায়িক হামলার দাবিতে যে ছবিগুলো প্রচার করা হচ্ছে সেগুলো সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং ২০২১ সালের। সুতরাং ইনসাইড রিউমারস আলোচিত দাবিটি মিথ্যা বলে শনাক্ত করেছে।