সম্প্রতি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে জাতিসংঘের মহাসচিব স্টিফেন ডুজারিকের একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। দাবি করা হচ্ছে, “আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ড. ইউনুস রাষ্ট্রপতির নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে জাতিসংঘের নিরাপত্তা বাহিনীর মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো হবে।”
এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৮০ হাজারের অধিক বার দেখা হয়েছে এবং পাঁচশো বারের বেশি শেয়ার করা হয়েছে।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। পর্যবেক্ষণে ভিডিওর কোথাও শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানো কিংবা তার কাছে আগামী ২৫ দিনের মধ্যে ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্টিফেন ডুজারিককে এ বিষয়ে কোনো কিছু বলতে শোনা যায়নি।
শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়ে যদি জাতিসংঘের মহাসচিব স্টিফেন ডুজারিক কোনো মন্তব্য বা সংবাদ সম্মেলন করতেন তাহলে সেটি নিয়ে দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম অবশ্যই সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হতো। কিন্তু দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধান করেও দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে এ বিষয়ে কোনো সংবাদ বা তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, ভিডিওটির বিষয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে জাতিসংঘের ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ৩০ জুলাই বাংলাদেশে ছাত্র জনতা গণঅভ্যুত্থান চলাকালীন সময়ে “Venezuela, South Asia floods & other topics- Daily Press Briefing (29 July 2024) | United Nations” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওর বিস্তারিত অংশে থাকা তথ্য অনুযায়ী, “জাতিসংঘের মহাসচিব বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ও সহিংস পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন, শান্তি ও সংযম বজায় রাখতে হবে এবং গ্রেফতার, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও অতিরিক্ত বলপ্রয়োগের অভিযোগগুলো স্বচ্ছভাবে তদন্ত করতে হবে। সবাইকে মত প্রকাশ ও শান্তিপূর্ণ সমাবেশের অধিকার দিতে হবে। জাতিসংঘ আশা করছে বাংলাদেশ মানবাধিকার রক্ষা করবে এবং মনে করিয়ে দিয়েছে, জাতিসংঘের চিহ্নিত যানবাহন কেবল শান্তিরক্ষা মিশনের জন্য ব্যবহার করা যায়।”
অর্থাৎ ভিডিওর কোথাও শেখ হাসিনা কিংবা তার ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয়ে কোনো কিছু বলা হয়নি।
উল্লেখ্য, গত বছর ২৫ জুলাই বিবিসি বাংলা “কারফিউর সময় ঢাকার রাস্তায় ‘ইউএন’ লেখা সেনাবাহিনীর সাঁজোয়া যান নিয়ে বিতর্ক” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বিষয়টি নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয় সে সময়।
আরও অনুসন্ধানে জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে গতবছরের ২৪ জুলাই “Daily Press Briefing by the Office of the Spokesperson for the Secretary-General” শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও একই বিষয় খুঁজে পাওয়া যায়।
সুতরাং, সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জাতিসংঘের মহাসচিব স্টিফেন ডুজারিককে জড়িয়ে ছড়ানো দাবিটি মিথ্যা।