সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে “মরক্কোর মরুভূমিতে বিজ্ঞানীরা বিশাল আকৃতির মানুষের খুলি আবিষ্কার করেছে” দাবিতে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে৷
ভিডিওতে দাবি করা হয়, মরক্কোর মরুভূমিতে বিজ্ঞানীরা বিশাল আকৃতির মানুষের মাথার খুলি আবিষ্কার করেছে, যা সাধারণ মানুষের চেয়েও অনেক বড়৷
এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও রয়েছে এখানে (আর্কাইভ) এবং ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও রয়েছে এখানে (আর্কাইভ)। এর মধ্যে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি দেখেছে প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ, শেয়ার হয়েছে ৬ হাজার বার৷
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধানে আলোচিত দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি, বরং জানা গিয়েছে যে ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি করা হয়েছে৷
অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে “Most Amazing Top 10” নামের একটি ফেসবুক পাতা থেকে৷ ৫.১ মিলিয়ন ফলোয়ার সমৃদ্ধ এই ফেসবুক পাতায় একই দাবিতে রয়েছে আরও অসংখ্য ভিডিও৷ ভিডিওগুলো পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, বিজ্ঞানীরা বিশাল আকৃতির কুমির, মাকড়সা, সাপ কিংবা মাছের সন্ধান পেয়েছে এমন দাবিতে একাধিক ভিডিও প্রচার করা হয়েছে৷
অন্যদিকে “Most Amazing Elite” নামে ইউটিউব চ্যানেল থেকেও একই দাবিতে আলোচিত ভিডিওটি প্রচার করা হয়েছে। এই চ্যানেলে ৫ হাজারের বেশি ভিডিও রয়েছে, যার প্রত্যেকটি ফেসবুক পেজের ভিডিও’র সঙ্গে হুবহু মিল খুঁজে পেয়েছে ইনসাইড রিউমারস। ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজ একই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে বলে নিশ্চিত হয়েছে ইনসাইড রিউমারস।
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, প্রথমত আলোচিত ভিডিওটিতে মরক্কোর মরুভূমির কথা বলা হলেও কোন মরুভূমি তা উল্লেখ করা হয়নি৷ দ্বিতীয়ত ভিডিওতে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিকদের চোখ ও মুখ একে অপরের উপর ওভারল্যাপ করতে দেখা যায়। এর মধ্যে একজন প্রত্নতাত্ত্বিকের চেহারা সাধারণ মানুষের মতো দেখা যায়নি৷ তার নাক ও চোখ অনেকটা কঙ্কালের মতো দেখা গেছে।
এমনকি প্রত্নতাত্ত্বিকদের হাতের আঙ্গুলে অসামঞ্জস্যতা দেখা যায়৷ ভিডিওতে যে দৃশ্য দেখানো হয়, তা সাধারণত বাস্তবিক মরুভূমিতে দেখা যায় না, বরং অনেকটা অ্যানিমেটেড ফ্রেমের মতো মনে হয়৷ যা সাধারণত এআই কনটেন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায়৷
তবে পুরোপুরি নিশ্চিত হতে ইনসাইড রিউমারস এআই কন্টেন্ট শনাক্তকারী প্লাটফর্ম ডিকপি এআই (Decopy AI) এর সাহায্য নেয়। এতে দেখা যায়, এই ভিডিওটি এআই দিয়ে তৈরি হবার সম্ভাবনা ৯৯.৯৯ শতাংশ।
মরক্কোতে মানুষের খুলি আবিষ্কৃত সংক্রান্ত বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদনও অনুসন্ধান করে দেখেছে ইনসাইড রিউমারস। এই সংক্রান্ত ২০১৭ সালে প্রকাশিত বিবিসি, দ্যা নিউইয়র্ক টাইমস ও সিনএনএন এর প্রতিবেদন খুঁজে পেয়েছে ইনসাইড রিউমারস।
প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মরক্কোর জেবেল ইরহৌদ নামক স্থানে প্রায় ৩ লক্ষ বছর আগের হোমো সেপিয়েন্সের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে৷ যা এখন পর্যন্ত আবিষ্কার হওয়া পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন হোমো সেপিয়েন্সের জীবাশ্ম৷
প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায়, খুলির করোটির ধারণক্ষমতা ১২০০ থেকে ১৩০০ ঘন সেন্টিমিটার। যা বর্তমান সময়ের একজন সাধারণ মানুষের মতোই।
সুতরাং, সার্বিক অনুসন্ধান থেকে জানা যায় আলোচিত ভিডিওতে দাবি করা মানুষের খুলি বিশাল আকৃতির নয়, বরং একজন সাধারণ মানুষের মতোই। একই সঙ্গে ভিডিওটি পর্যবেক্ষণে এটি এআই দ্বারা তৈরি বলে নিশ্চিত হয়েছে ইনসাইড রিউমারস।