Home / জাতীয় / শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবিতে হোয়াইট হাউজের নামে অপপ্রচার

শেখ হাসিনা এখনো বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী দাবিতে হোয়াইট হাউজের নামে অপপ্রচার

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে “শেখ হাসিনার পদত্যাগের সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং এখনো তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী” দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

৩ মিনিট ৭ সেকেন্ডের প্রচারিত এই ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, “জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে আবেদনের পর মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের কোনো সত্যতা খুজে পাওয়া যায়নি। হোয়াইট হাউস নিশ্চিত করেছে যে, আইন অনযায়ী এখনো শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এবং তিনি পদত্যাগ করেননি। তিনি পদত্যাগ করেননি। খুব শিগগিরই এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে অনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়া হবে।”

এই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ) ।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত প্রায় ১৮ হাজার বার দেখা হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটিতে আটশো’র উপরে শেয়ার এবং প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।

ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান 

অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। ভিডিও পর্যবেক্ষণে ভিডিওতে আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।

ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে ২০২৪ সালের ১১ সেপ্টেম্বর দ্য অস্ট্রেলিয়া টুডে-তে প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির মিল লক্ষ্য করে ইনসাইড রিউমারস।

ভিডিওতে দেখা যায়, অস্ট্রেলিয়ার জ্বালানি মন্ত্রী বোয়েন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি পার্লামেন্টে তুলে ধরেন এবং এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। ভিডিওতে তাকে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাতে দেখা যায়। তবে ভিডিওর কোথাও তাকে শেখ হাসিনার বিষয়ে কথা বলতে শোনা যায়নি। 

পরবর্তীতে ভিডিওটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে অনুসন্ধানে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম দ্য ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেস গত বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর “বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান মন্ত্রীর উদ্বেগ প্রকাশ” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অস্ট্রেলিয়ার জলবায়ু পরিবর্তন ও জ্বালানি মন্ত্রী ক্রিস বোয়েন বলেন, এই কঠিন সময়ে অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশিদের পাশে আছে। ১০ সেপ্টেম্বর অস্ট্রেলিয়ান পার্লামেন্টে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে বাংলাদেশে সরকার পতন ও সহিংসতার ঘটনা পুরো সংসদ উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যেকোনো সহিংসতাই নিন্দনীয়।” এ সময় তিনি বিশেষভাবে হিন্দু, খ্রিস্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার দাবি উত্থাপন করেন।

২০২১ সালের দুর্গাপূজার সময়ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হয়েছিল উল্লেখ করে বোয়েন বলেন, “আমি আবারও সংসদে এই বিষয়টি তুলে ধরছি, যাতে বাংলাদেশি সংখ্যালঘুরা বুঝতে পারেন — আমরা তাদের দিকে খেয়াল রাখছি এবং তাদের কথা শুনছি।”

সঙ্গীতশিল্পী রাহুল আনন্দের বাড়ি লুটপাট ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে বাউয়েন বলেন, “এ রকম অনেক বেদনাদায়ক গল্প আছে। আমরা চাই বাংলাদেশে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক। সেইসঙ্গে আমি নতুন সরকারপ্রধান ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রচেষ্টাকে স্বাগত জানাচ্ছি।”

অর্থাৎ ভিডিওটি অস্ট্রেলিয়ার জ্বালানি মন্ত্রী বোয়েনের বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে পার্লামেন্টে তুলে ধরা এক বক্তব্যের। উক্ত বক্তব্যের কোথাও তিনি শেখ হাসিনা হোয়াইট হাউজের আইন অনুযায়ী এখনও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী কিংবা  তিনি পদত্যাগ করেনি জাতীয় কোনো কিছুই বলেননি। 

এছাড়া, দেশীয় কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যম আলোচিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য কিংবা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।

সুতরাং, সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, প্রচারিত ভিডিওটি হোয়াইট হাউসের নয়, বরং অস্ট্রেলিয়ার পার্লামেন্টের। পাশাপাশি আলোচিত দাবিটি মিথ্যা।

Tagged: