সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি “আপার শোকে কর্ণফুলী টানেলও কাঁদছে” দাবিতে একটি ফটোকার্ড প্রচার করা হচ্ছে।
দৈনিক জনকন্ঠের ফটোকার্ড শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, এটি কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত টানেল এবং দুর্নীতির কারণে তিন বছরের মধ্যে একটি দৃষ্টিনন্দন টানেলের এই বেহাল দশা।
এই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইনসাইড রিউমারস এর অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। অনুসন্ধানে দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় ফটো কার্ডটির সন্ধান পাওয়া যায়।
ফটোকার্ডের মন্তব্যের ঘরে থাকা লিংকের মাধ্যমে “তিন বছর না যেতেই ঝরনার মত পানি পড়ছে দৃষ্টিনন্দন টানেলে” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত বান্দরবানের বর্তমান বাসস্ট্যান্ড থেকে হাফেজঘোনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল যাওয়ার পথে নির্মিত ৫০০ ফুট দৈর্ঘ্য টানেলটি তিন বছর না যেতেই বিভিন্ন অংশে ফাটল সৃষ্টি হয়ে ঝরনার মত পানি বের হচ্ছে। এ টানেলটিতে বিগত সরকারের আমলে উন্নয়ন বোর্ডের বান্দরবান ইউনিটের নির্বাহী প্রকৌশলী ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের যোগসাজশে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।”
পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানে দেশীয় গণমাধ্যম দৈনিক আমাদের সময় ডট কমের ওয়েবসাইটে “বান্দরবানের ১১ কোটি টাকার টানেলে পানি চুয়ে পড়ছে, ধ্বসের ঝুঁকিতে যাত্রীরা” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে নির্মিত টানেলটি নির্মাণের শুরু থেকেই দুর্নীতিবাজ প্রকৌশলীদের মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে ম্যানেজ করে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে নির্মাণ কাজ চালিয়ে এসেছে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও বান্দরবান জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাজু বড়ুয়া গং।”
প্রতিবেদনের বরাতে আরও জানা যায়, “পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড বান্দরবান ইউনিটের অর্থায়নে ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয়েছে এ টানেলটি। টানেল উদ্বোধন হয়েছে বিগত ২০২৩ সালের ২৭ অক্টোবর। তবে টানেলটি নির্মাণের ফলে বর্তমান বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজট কমে আসবে বলা হলেও টানেলটি নির্মাণের পর যানজট দ্বিগুণ বেড়েছে।”
অর্থাৎ দৈনিক জনকণ্ঠের প্রচারিত ফটোকার্ডকেই কর্ণফুলী টানেলের দাবি করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। তবে দৈনিক জনকণ্ঠসহ দেশীয় অন্যান্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে উক্ত টানেলটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের বর্তমান বাসস্ট্যান্ড থেকে হাফেজঘোনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল যাওয়ার পথে নির্মিত ৫০০ ফুট দীর্ঘ টানেল বলেই উল্লেখ রয়েছে।
সুতরাং সার্বিক পর্যবেক্ষণ এটি স্পষ্ট যে, প্রচারিত দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার ফটোকার্ডটি কর্ণফুলী টানেলের নয়; বরং এটি পার্বত্য চট্টগ্রামের বান্দরবানের বর্তমান বাসস্ট্যান্ড থেকে হাফেজঘোনা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল যাওয়ার পথে নির্মিত ৫০০ ফুট দীর্ঘ টানেল।