গত ১৪ আগস্ট থেকে পাকিস্তানে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যাকে কেন্দ্র করে সম্প্রতি ইন্টারনেটে “পাকিস্তানের ভয়াবহ মেঘ ফেটে বৃষ্টি” শীর্ষক দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিও আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
একই দাবিতে শর্ট ভিডিও শেয়ারিং প্লাটফর্ম টিকটকে প্রচারিত ভিডিও আছে এখানে (আর্কাইভ)
এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ ৫০ এর অধিক বার এবং শেয়ার হয়েছে প্রায় ৩০০ বার।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। আলোচিত ভিডিওর মতো কোনো দৃশ্য যদি পাকিস্তানের কোথাও দেখা যেতো তাহলে তা নিয়ে গণমাধ্যমে তথ্য, সংবাদ বা ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া স্বাভাবিক ছিলো।
কিন্তু অনুসন্ধানে পাকিস্তানি কিংবা আন্তর্জাতিক কোনো গণমাধ্যমে উক্ত ভিডিওর বিষয়ে বা ভিডিওকে কেন্দ্র করে কোনো তথ্য বা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
বরং ভিডিওটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করলে এতে কিছু অসঙ্গতি চোখে পড়ে যা ভিডিওটি এআই নির্মিত ভিডিও হওয়ার দিকে ইঙ্গিত দেয়। যেমন স্বাভাবিকভাবে মেঘভাঙা বৃষ্টি হলে পানি ছড়িয়ে পড়ে বিস্তৃত এলাকায় ঝরে পড়ে, কিন্তু এখানে দেখা যাচ্ছে আগ্নেয়গিরির ধোঁয়ার মতো সোজা স্তম্ভ আকারে নামছে, যা প্রকৃতির নিয়মের সঙ্গে যায় না।
পাশাপাশি ভিডিওটিতে আকাশে ঘন কালো মেঘ জমে থাকা সত্ত্বেও নিচের জমি ও ধানক্ষেতে তুলনামূলক উজ্জ্বল আলো দেখা যাচ্ছে। পুরো মেঘ ও বৃষ্টির গঠনটি এত নিখুঁত ও নাটকীয়ভাবে উপস্থাপিত যে এটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, বরং সিনেমাটিক ভিজ্যুয়ালের মতো মনে হয়।
বাস্তব ক্লাউডবার্স্টে আকস্মিক প্রবল বর্ষণ হয়, কিন্তু এভাবে ধোঁয়ার মতো ঘনীভূত স্তম্ভ আকারে পানি নামতে দেখা যায় না। সব মিলিয়ে, ছবিটি বাস্তব কোনো দুর্যোগ নয়, বরং কৃত্রিমভাবে তৈরি একটি ভিজ্যুয়াল বলেই মনে হচ্ছে।
এর সূত্র ধরে ভিডিওটি এআই নির্মিত কিনা তা যাচাই করার জন্য এআই শনাক্তকারী টুল ‘Cantilux’ এ পরীক্ষা করলে ভিডিওটি এআই ভিডিও হওয়ার সম্ভাবনা ৯২ শতাংশ বলে ফলাফল আসে।
উল্লেখ্য, ‘মেঘ ফেটে বৃষ্টি’ বা Cloudburst বলতে বোঝায় স্বল্প সময়ে হঠাৎ এবং অত্যন্ত ভারী পরিমাণে বৃষ্টিপাত যা সাধারণত ঘন্টায় ১০০ মিমি বা তার বেশি। বিশেষ করে পর্বতময় অঞ্চলে, যেখানে উষ্ণ এবং আর্দ্র বাতাস দ্রুত ওঠানামা করে, মেঘে জমে থাকে বিপুল জল এবং তা এক মুহূর্তে ঝরতে পারে যার ফলে আকস্মিক প্লাবন (flash flood) ও ক্ষয়ক্ষতি ঘটে।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ আগস্ট থেকে পাকিস্তানে শুরু হওয়া অতিভারী বর্ষণে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়ার বুনের, বাজাউর এবং বাটগ্রামে সবথেকে বেশি ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটেছে। সর্বশেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ বন্যায় মৃতের সংখ্যা ৬৫০ জনে দাঁড়িয়েছে। ভারী বৃষ্টিপাত, ভূমিধস এবং আকস্মিক মেঘ ভাঙনের কারণে দেশব্যাপী এই প্রাণহানি ও ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছে বলে জানা যায়।
সুতরাং সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, পাকিস্তানের মেঘ ফেটে বৃষ্টির ঘটনা ঘটলেও আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত ভিডিওটি আসল নয়; বরং এআই নির্মিত ভিডিওকেই আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।