সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি “যাকে জুলিয়ে পেটানো হচ্ছে উনি একজন মেয়ে, আর এই ঘটনাটি আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ ঢাকা উত্তরার, মেয়ের বাবার কাছ থেকে চাঁদার টাকা না পেয়ে মেয়েকে তুলে এনে এই নির্যাতন…..” দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
এই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজারের অধিক বার দেখা হয়েছে এবং শেয়ার হয়েছে প্রায় শতাধিক বার।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। ভিডিওর একাধিক কি-ফ্রেম ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে বিজেপি নেতা ও পশ্চিমবঙ্গের লোকসভা সদস্য ড. সুকান্ত মজুমদারের এক্স একাউন্টে (সাবেক টুইটার) ২০২৪ সালের ৯ জুলাই একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত পোস্টে যুক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
পোস্টের ক্যাপশনে থাকা বলা হয়, “কামারহাটির তালতলা ক্লাব থেকে থেকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তৃণমূল কংগ্রেসের বিধায়ক মদন মিত্রের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জয়ন্ত সিংহ এক তরুণীকে নৃশংসভাবে নির্যাতন করছেন। নারী অধিকারের নিয়ে কথা বলা সরকারের আমলে এমন ঘটনা লজ্জাজনক।”
তবে ভিডিওতে মারধরের শিকার ব্যক্তি মেয়ে কিনা, সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে ভিডিওটির সূত্র ধরে অনুসন্ধানে ভারতের ইংরেজি দৈনিক “The Telegraph India” এর ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ৯ জুলাই “Bengal: Old video clip of girl being assaulted goes viral; police arrest two persons” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়েই বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “প্রায় দুই বছরের (ফেব্রুয়ারি, ২০২১) পুরনো একটি ভিডিও এখন ভাইরাল হয়েছে। যেখানে উত্তর ২৪ পরগনার আরিয়াদা এলাকার একটি ক্লাবে এক তরুণীকে উপুড় করে ধরে রাখা হয়েছে এবং একই সময়ে অন্যরা লাঠি দিয়ে তাকে আঘাত করছেন।”
পুলিশ এই ভিডিও নজরে আসার পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে একটি মামলা দায়ের করেছে এবং ভিডিওতে থাকা সন্দেহভাজন দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে। বিজেপি দাবি করেছে, তৃণমূল বিধায়কের ঘনিষ্ঠ সহযোগী জয়ন্ত সিংহ এই আক্রমণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। অন্যদিকে তৃণমূল ভিডিওটির সত্যতা যাচাইয়ের দাবি করেছে।
আরও অনুসন্ধানে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়। বরং, ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটি এলাকায় অবস্থিত আরিয়াদা তালতলা স্পোর্টিং ক্লাবের ভেতরে ঘটে যাওয়া পুরনো ঘটনাকেই বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।