সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি “চট্টগ্রামে লোহাগোড়ায় স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রাতভর গণধর্ষণ পরে শ্বাসরোধ করে, খুন করেছে দুর্বৃত্তরা। এখনো কাউকেই গ্রেপ্তার করতে পারেনি ইউনুছ প্রশাসন। ফ্যাসিস্ট ইউনুছ হঠাও দেশ বাঁচাও!” দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজারের অধিক বার দেখা হয়েছে এবং ভিডিওটি ৯০০ এর অধিক বার শেয়ার করা হয়েছে।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। ভিডিওর বিষয়ে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে “Rajkumar Karak Prince” নামক একটি ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে গত ১৫ আগস্ট আপলোড হওয়া একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওর ক্যাপশনে থাকা বর্ণনা থেকে জানা যায়, নন্দীগ্রামের রায়নগরের বাসিন্দা সুকুমার জানার মেয়ে দিপালী জানা (নার্স) কে ভিডিওটি পোস্ট করার আগের দিন অর্থাৎ ১৪ আগস্ট সিঙ্গুরে কর্মস্থল থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে। তিন দিন আগে তিনি শিবম সেবা সদন নার্সিংহোমে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।
পরবর্তীতে উক্ত পোস্টের সূত্র ধরে অনুসন্ধানে “TV9 Bangla”-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত ১৪ আগস্ট “Hooghly Nurse Death: সিঙ্গুরে নার্সিংহোমে পাওয়া গেলো নার্সের ঝুলন্ত দেহ” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও প্রতিবেদনের শুরুতে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, স্ট্রেচারে করে দিপালীর মরদেহ আনা হচ্ছে। ওই ফুটেজে তার পরনের পোশাকের রঙ ও নকশা, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর পোশাকের সঙ্গে মিলে যায়।
ভিডিও প্রতিবেদনে থাকা বর্ণনা থেকে জানা যায়, পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে শিবম সেবা সদন নামের বেসরকারি ক্লিনিক থেকে নার্স দিপালী জানার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। মাত্র তিন দিন আগে তিনি সেখানে যোগ দিয়েছিলেন। পরিবার অভিযোগ করছে, এটি হত্যাকাণ্ড। তবে ধর্ষণের বিষয়ে কোনো তথ্য প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই।
দাবিটির বিষয়ে আরও অনুসন্ধানে ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকার ওয়েবসাইটে গত ১৫ আগস্ট “সিঙ্গুরে নার্সের মৃত্যুর ঘটনায় গ্রেফতার নার্সিংহোমের মালিক ও প্রেমিক! ঘনাচ্ছে রহস্য” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনেও পশ্চিমবঙ্গের সিঙ্গুরে অবস্থিত একটি বেসরকারি ক্লিনিক থেকে নার্স দিপালী জানার অস্বাভাবিক মৃত্যুর বিষয়ে একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
এছাড়া, অনুসন্ধানে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় কোনো স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণের অভিযোগের বিষয়ে দেশীয় কোনো গণমাধ্যমে কোনো প্রকার তথ্য কিংবা সংবাদ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং সার্বিক দিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়; বরং ভারতের পশ্চিতবঙ্গের এক নার্সের মরদেহের ভিডিওকে চট্টগ্রামের লোহাগড়ায় স্কুল ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গণধর্ষণ ও শ্বাসরোধ করে হত্যার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হচ্ছে।