সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি “বান্দারবনে রুমায় প্রকাশ্য দিনে-দুপুরে নারী অপহরণ! প্রকাশ্য কয়েকজন সন্ত্রাসী রাস্তা থেকে এক নারীকে পিটিয়ে মটরসাইকেলে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশেপাশে অনেকে থাকলেও কেউ কোন প্রতিবাদ করেনি, এটাই মবের মুল্লুক। এটাই মহাজনের সংস্কার…” দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।
এই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার আগ পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজারের অধিক বার দেখা হয়েছে এবং শেয়ার হয়েছে প্রায় শতাধিক বার।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। ভিডিওর একাধিক কি-ফ্রেম ব্যবহার করে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম “Business Standard” এর ২০১৯ সালের ৩ জুলাই প্রকাশিত “Couple allegedly thrashed by family in UP’s Bareilly” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে যুক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটি থেকে জানা যায়, “ভারতের উত্তর প্রদেশের বরোইলিতে এক নারী ও তার স্বামীকে শ্বশুরবাড়ির সদস্যরা মারধর করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। পরে পরিবারের লোকজন ওই নারীকে জোর করে তুলে নিয়ে যায়।”
অভিযোগ রয়েছে, পরিবারের সম্মতি ছাড়াই বিয়ে করায় এ ঘটনা ঘটে। এক বছর আগে তারা বিয়ে করে জেলা ছেড়ে পালিয়ে ছিলেন এবং সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসলে এই ঘটনা ঘটে। পরে আহত দম্পতিকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ বিষয়ে বারোইলির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) সানসার সিং জানান, “নারীকে উদ্ধার করা হয়েছে এবং একই দিন মামলা দায়ের করা হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।”
পরবর্তীতে ভিডিওটির সূত্র ধরে অধিক অনুসন্ধানে ভারতের ইংরেজি দৈনিক “The Asian Age” এর ওয়েবসাইটে ২০১৯ সালের ৩ জুলাই “Bareilly: Couple beaten up, woman abducted for marrying without consent India” শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনেও আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির বিষয়েই বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, উত্তর প্রদেশের বরোইলিতে এক দম্পতিকে মেয়ের পরিবারের লোকজন মারধর করে। পরে মেয়েটিকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় তারা। কারণ, মেয়েটি পরিবারের অনুমতি ছাড়া প্রেম করে বিয়ে করেছিল।
দম্পতি এক বছর আগে বিয়ে করে পালিয়ে যায়। সম্প্রতি এলাকায় ফিরে আসলে এ ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ মেয়েটিকে উদ্ধার করে এবং মামলা করে।
পুলিশ জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আরও অনুসন্ধানে ভারতীয় গণমাধ্যম ইন্ডিয়া টিভির একটি প্রতিবেদনেও একই তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
আর ভারতের উত্তর প্রদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত জেলা বারোইলির এই ঘটনাকেই বাংলাদেশের বান্দরবানের দিনে দুপুরে নারী অপহরণের ঘটনা বলে প্রচার করা হচ্ছে।
সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের কোনো ঘটনার নয়; বরং, ভারতের উত্তর প্রদেশের একটি ঘটনা।