Home / মতামত / আওয়ামী লীগের পক্ষে বয়ান তৈরিকে ‘সত্য প্রকাশ’ ভাবতেন বিভুরঞ্জন সরকার?

আওয়ামী লীগের পক্ষে বয়ান তৈরিকে ‘সত্য প্রকাশ’ ভাবতেন বিভুরঞ্জন সরকার?

সিনিয়র সাংবাদিক বিভুরঞ্জন সরকারের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে শুক্রবার৷ তার মৃত্যুর কারণ এখনো জানা যায়নি৷ তবে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত নানা খবর এবং তার ‘শেষ চিঠি’ হিসেবে প্রকাশিত একটি মতামত থেকে ধারনা করা যায় তিনি সম্ভবত আত্মহত্যা করেছেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত তার লেখাটি বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে, এটির চুলচেরা বিশ্লেষণ করেছেন অনেকে৷ এতে একজন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকের হতাশা যেমন ফুটে উঠেছে তেমনি তার লেখালেখি কিংবা নামের কারণে তার সন্তানদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও চাকুরি না হওয়ার মতো অভিযোগও রয়েছে৷

আমাদের দেশের এক বাস্তবতা হচ্ছে সরকার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে অনেকের জীবনে জটিলতা সৃষ্টি হয় বিশেষ করে যারা আগের সরকারের নানা অপকর্ম ঢেকে তাদের সব বিতর্কিত কার্যক্রমের বৈধতা নিশ্চিতে কাজ করেছেন৷ বিভুরঞ্জন সরকারের লেখালেখিতে সেই বিষয়টি ছিল৷ তিনি গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব গুরুতর অপরাধ করেছে সেগুলোর দিকে মনোযোগ দেননি৷ বরং শেখ হাসিনা সরকারকে তুষ্ট করতে নানা কিছু করেছেন৷ তার জন্য পরিতাপের বিষয় এই যে তারপরও তিনি আওয়ামীলীগপন্থি অনেক সাংবাদিক যেসব সুযোগ সুবিধা বাগিয়ে নিতে পেরেছেন তিনি তা পারেননি৷ তিনি বই লিখে, আবেদন করেও ‘সফল হননি’ বলে নিজেই লিখে গেছে৷ এটা নিয়ে তার মধ্যে যে হতাশা ছিল তা তিনি পরিষ্কার করে গেছেন৷

তার অতীতের লেখা পড়লে এবং শেষ চিঠি বিশ্লেষণ করলে এটা পরিষ্কার যে তিনি আওয়ামী লীগ ইস্যুতে ন্যায্য সাংবাদিকতা করেননি৷ বরং যতটা সম্ভব আওয়ামী লীগকে রক্ষার চেষ্টাই করেছেন৷ তার ‘সত্য প্রকাশ’ ছিল সেটা যা আওয়ামী লীগ তাকে বিশ্বাস করাতো বা তিনি আওয়ামী লীগের একজন অন্ধ ভক্ত হিসেবে বিশ্বাস করতে চাইতেন৷

তারপরও তার লেখালেখির কারণে তার সন্তানদের চাকুরি না হওয়াটা মেনে নেয়া যায়না৷ বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের উচিত হবে এই বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া৷

আত্মহত্যাকে মহিমান্বিত করার সুযোগ নেই৷ তাসত্ত্বেও বিভুরঞ্জন সরকার যদি আত্মহত্যা করে থাকেন সেটা সাংবাদিক সমাজের জন্য হতাশার৷ তার মতো একজন বর্ষীয়ান সাংবাদিকের যে বেতন হওয়া উচিত ছিল সেই বেতন তাকে দেয়া হয়নি৷ এটা ব্যর্থতা৷ আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমগুলোর মালিকরা বেতন দেয়ারক্ষেত্রে বেশ কৃপণ৷ তারা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে যতটা সোচ্চার, তেমনি সাংবাদিকদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগসুবিধা দেয়ারক্ষেত্রে মোটা দাগে ততটাই নির্বিকার৷ এভাবে চলতে পারে না৷

বর্তমান সরকারের উচিত গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের দেয়া সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে তৎপর হওয়া৷ বিভুরঞ্জন সরকারের মতো আর কারো অপমৃত্যু আমরা দেখতে চাই না৷

Tagged: