সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি ‘অবশেষে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত! পিআর পদ্ধতিতে ভোট ঐক্যমত না হলে গণভোট’ শিরোনামে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছবিসম্বলিত একটি ফটো কার্ড প্রচার করা হচ্ছে।
এই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের সাথে যোগাযোগ করে ইনসাইড রিউমারস। তিনি মুঠোফোনে জানান, “আমার জানা মতে প্রধান উপদেষ্টা এরকম কোনো বক্তব্য দেননি।”
বিষয়টি নিয়ে আরো অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ফটোকার্ডটি পর্যবেক্ষণ করে তাতে বেশ কিছু অসঙ্গতি খুঁজে পায় ইনসাইড রিউমারস।
প্রথমেই লক্ষণীয় বিষয় হলো, প্রচারিত ফটোকার্ডে কোন গণমাধ্যমের লোগো অথবা নাম না থাকা। সাধারণত গণমাধ্যম থেকে প্রচারিত ফটোকার্ডে উক্ত গণমাধ্যমের নাম ও লোগোর উল্লেখ থাকে। কিন্তু প্রচারিত ফটোকার্ডে তা অনুপস্থিত। এছাড়া প্রচারিত ফটোকার্ডের মন্তব্যের ঘরেও উক্ত দাবি সম্পর্কে কোনো তথ্য পায়নি ইনসাইড রিউমারস।
পরবর্তীতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে দেশীয় কোনো গণমাধ্যমেও উক্ত মন্তব্য সম্বলিত কোনো সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়নি। পাশাপাশি প্রধান উপদেষ্টার অফিসিয়াল ফেসবুক পাতা এবং সরকারের পক্ষ থেকেও উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য জানানো হয়নি।
অনুসন্ধানে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এখন টিভিতে প্রচারিত গত ২৬ জুন প্রধান উপদেষ্টা ও প্রধান নিবার্চন কমিশনারের সাক্ষাতের একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
সেই ভিডিও থেকে জানা যায়, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন গণমাধ্যমকে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে এটা একান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল, ফরমাল কোনো বৈঠক করিনি। যখন দলীয় সরকার থাকে তখন সরকারপ্রধানের সঙ্গে সিইসির সাক্ষাৎ হয় না। কিন্তু এখন আমি যেমন নিরপেক্ষ, প্রধান উপদেষ্টাও নিরপেক্ষ। তবে নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।”
এছাড়া গত ২১ আগস্ট এখন টিভিতে প্রচারিত “প্রধান উপদেষ্টার নতুন বক্তব্যে নির্বাচনী বার্তা অস্পষ্ট!” শিরোনামে আরেকটি প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “বিদেশি এক গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সংস্কার ও বিচার ছাড়া নির্বাচন হলে বাংলাদেশে আবারও পুরনো সমস্যাগুলো ফিরে আসবে বলে মন্তব্য করেছেন নোবেল বিজয়ী ড. ইউনুস।”
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, “জামায়াত নেতা নুরুল ইসলাম বুলবুল জুলাই ঘোষণাপত্রকে ‘অপরিপূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে এর আইনগত ভিত্তি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকেই দিয়ে যাবার জোর দাবি জানান। তিনি বলেন, বিএনপি একমত না হলে গণভোটের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় কঠোর আন্দোলনে নামবে তার দল।”
“তিনি আরো বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন, জুলাই ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন এবং ঘোষণাপত্রের আইনগত ভিত্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি সংস্কার ও বিচার কার্যকর করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বাধ্য করার জন্য তাদের কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।”
এখন টিভির প্রতিবেদনে বলা হয়, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণপরিষদ বা গণভোট নিয়ে বিশেষ আগ্রহ না দেখালেও নির্বাচনের আগে সংস্কার ও বিচারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে। এবং এখনও সবগুলো রাজনৈতিক দল একমত না হওয়ায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা যাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নির্বাচন পর্যবেক্ষকরা।”
পরবর্তীতে আরও অনুসন্ধানে দেশীয় গণমাধ্যম বাংলাদেশ প্রতিদিনে শনিবার “সংবিধানের বাইরে পিআর ভোটের সুযোগ নেই” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায় ইনসাইড রিউমারস।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, “শনিবার রাজশাহীর লোক প্রশাসন ভবনে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন উপলক্ষে রাজশাহীর অঞ্চলের নিবাচন কর্মকতাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেন, আনুপাতিক বা পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন সংবিধানে নেই। পিআর পদ্ধতি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দাবি করছে। কিন্তু এটি আমাদের সংবিধানে নেই। কোনো আইনেও নেই। আমরা শাসনতন্ত্র ও আইনের দ্বারা নির্দেশিত। এর বাইরে যেতে পারি না।”
এছাড়া বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল যমুনা টেলিভিশন ও চ্যানেল আইয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
অর্থাৎ, কোনোরকম তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই আলোচিত উক্তিটি প্রধান উপদেষ্টার নামে প্রচার করা হয়েছে। সার্বিক পর্যবেক্ষণ এটি স্পষ্ট যে, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে ড. মুহম্মদ ইউনূসের নামে ফটোকার্ডে প্রচারিত দাবিটি মিথ্যা ও বানোয়াট।