গত ১৩ আগস্ট “মালয়েশিয়া সরকার দেশটির অর্থনীতিতে উচ্চ-দক্ষতার কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশি ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের ‘গ্র্যাজুয়েট প্লাস’ ভিসা দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে” দাবিতে দেশীয় কয়েকটি গণমাধ্যম প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷
এই দাবিতে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দৈনিক যুগান্তর (আর্কাইভ), দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস (আর্কাইভ) এবং দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড বাংলা (আর্কাইভ)।
তবে ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবি নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো চুক্তি করেনি মালয়েশিয়া৷ অন্তবর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের বরাতে দুই দেশের মধ্যে প্রাথমিকভাবে আলোচনা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এ বিষয়ে এখনো মালয়েশিয়ার তরফ থেকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে দেশটির উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী৷
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বাংলাদেশের ১০ হাজার শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্রাজুয়েট প্লাস’ ভিসা নিয়ে দেশীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের শিরোনামে “ভিসা চালুর উদ্যোগ”, “ভিসা পাবেন” শব্দচয়নের মাধ্যমে আলোচিত দাবিকে জোরালো করা হয়েছে৷
গত ১৩ আগস্ট দৈনিক যুগান্তরে প্রকাশিত “বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা মালয়েশিয়ায় ‘গ্র্যাজুয়েট প্লাস’ ভিসা পাবেন, সুবিধা কী” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ একই দিনে দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের বাংলা সংস্করণে “মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্রাজুয়েট প্লাস ভিসা’ চালুর উদ্যোগ” শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস শিরোনাম করে “মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্রাজুয়েট প্লাস ভিসা’ চালুর উদ্যোগ”।
প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়, “মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ‘গ্রাজুয়েট প্লাস’ ভিসা চালুর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ভিসার মাধ্যমে হাজার হাজার শিক্ষার্থী দেশটির দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনীতিতে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন চাকরিতে যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।”
সংবাদের সূত্র হিসেবে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফাইড ফেসবুক পাতা Chief Adviser GOB-তে প্রকাশিত একটি পোস্টে আইন ও প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুলকে উল্লেখ করা হয়৷
প্রতিবেদনগুলোতে অধ্যাপক আসিফ নজরুলের একটি উদ্ধৃতি উল্লেখ করা হয়৷ উদ্ধৃতিতে আসিফ নজরুল বলেন, “উচ্চ শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। নীতিগতভাবে তিনি মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য গ্র্যাজুয়েট পাস ভিসা দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। তবে নীতিটি কার্যকর হওয়ার আগে উভয় পক্ষকে কিছু আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করতে হবে।”
এখানে উল্লেখ্য, প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পাতায় প্রকাশিত পোস্টে ভিসা চালুর সম্ভাবনার কথা বলা হলেও মূলধারার গণমাধ্যমের শিরোনামে ‘উদ্যোগ’, ‘ভিসা পাবেন’ বলে উল্লেখ করা হয়; যা বিভ্রান্তিকর৷
প্রকৃতপক্ষে, বাংলাদেশের সঙ্গে এ ধরণের কোনো চুক্তি হয়নি বলে নিশ্চিত করেছে মালয়েশিয়া৷ এমনকি বাংলাদেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদকে ভুল ও ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির উচ্চশিক্ষামন্ত্রী দাতুক সেরি ড. জাম্ব্রি আবদ কাদির।
মালয়েশিয়ার The Star সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে বলা হয়,”মালয়েশিয়ার উচ্চশিক্ষামন্ত্রী দাতুক সেরি ড. জাম্ব্রি আবদ কাদির বলেছেন, মালয়েশিয়ায় অধ্যয়নরত ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে কাজের সুযোগ দিতে ‘গ্র্যাজুয়েট পাস’ দেওয়ার যে দাবি ওঠেছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।”
“সম্প্রতি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মালয়েশিয়া সফরের সময় এমন কোনো চুক্তি হয়নি, যা দেশটিকে ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে কাজের সুযোগ দিতে বাধ্য করত।”
দ্যা স্টারের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ড. জাম্ব্রি কেদাহ রাজ্যের শিল্প ও বিনিয়োগ, উচ্চশিক্ষা, বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন কমিটির চেয়ারম্যান ড. হাইম হিলমান আব্দুল্লাহকে সতর্ক করে বলেন, “যে কোনো বিষয়ে, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষা সম্পর্কিত বিষয়ে মন্তব্য করার আগে আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।”
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের একটি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে তিনি অভিযোগ করেছেন, আমি মালয়েশিয়ায় থাকা ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে কাজের সুযোগ দিতে ‘গ্র্যাজুয়েট পাস’ দেওয়ার বিষয়ে সম্মতি দিয়েছি। এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভুল ও অসত্য।”
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ড. জাম্ব্রি আরও উল্লেখ করেন, “মালয়েশিয়া এ বিষয়ে কোনো সম্মতি দেয়নি এবং এতে মানুষ উদ্বিগ্ন হওয়া নিয়ে হাইম হিলমান যে দাবি করেছেন — সেটি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য।”
সবকিছু পর্যালোচনায় মালয়েশিয়া ১০ হাজার বাংলাদেশি শিক্ষার্থীকে ‘গ্র্যাজুয়েট পাস’ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে দাবিটিকে বিভ্রান্তিকর বলে শনাক্ত করছে ইনসাইড রিউমারস।