অপহরণের টাকা না দেওয়ায় বিএনপি নেতার বাড়িতে চালের ড্রামের ভেতরে শিশুর লাশ পাওয়া গেছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে৷
১ মিনিট ৩ সেকেন্ডের সেই ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়,“অপহরণের পরে টাকা না দেওয়ায়, শিশুর লাশ পাওয়া গেলো বিএনপির নেতার বাড়িতে চালের ড্রামের ভিতরে। আর কত টাকা জন্য নিচে নামবে,বিএনপির লোকজন। টাকা লাগলে টাকা নে,আমার শিশুর জীবন ফিরিয়ে দে!” (বানান অপরিবর্তিত)
ভিডিওতে দেখা যায়, ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তা সবুজ রঙের চালের ড্রাম থেকে লাশ উদ্ধারের চেষ্টা করছে এবং একজন নারীকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
আলোচিত দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট রয়েছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। এর মধ্যে একটি ভিডিও দেখেছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার মানুষ, শেয়ার হয়েছে ২৬৯ বার৷
তবে ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। এটি ২০২২ সালের ২ অক্টোবর যশোরের পতেঙ্গালী গ্রামে প্রতিবেশীর বাড়ির চালের ড্রাম থেকে সানজিদা নামের চার বছরের এক শিশুর মরদেহ উদ্ধারের দৃশ্য।
অনুসন্ধানের শুরুতে “কি-ওয়ার্ড সার্চ” পদ্ধতির মাধ্যমে ২০২২ সালের ২ অক্টোবরে “Khajura Express-খাজুরা এক্সপ্রেস” নামে ফেসবুক পাতা থেকে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়; যার সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া গিয়েছে৷
ভিডিওর ক্যাপশনে বলা হয়,”যশোর সদর উপজেলার পতেঙ্গালী গ্রামে একটি বাড়ির চালের ড্রাম থেকে সানজিদা নামের চার বছরের এক শিশুর লাশ উদ্ধার করেছে ডিবি পুলিশ। এ ঘটনায় ওই বাড়ির মালিক আঞ্জুয়ারা বেগমকে আটক করা হয়েছে। নিহত সানজিদা ওই গ্রামের সোহেল হোসেনের মেয়ে।”
অধিকতর অনুসন্ধানে সময় টিভিতে (Somoy TV) প্রচারিত একটি ভিডিও প্রতিবেদনও পাওয়া যায়৷ এ ঘটনায় একই দিনে চ্যানেলে আইও (Channel-i) একটি ভিডিও প্রতিবেদন প্রচার করে৷ প্রতিবেদনে দেখানো স্থান, ডিবি পুলিশ কর্মকর্তা এবং পরিবেশের সাথে দাবিকৃত ভিডিওটির মিল পাওয়া যায়।
এ ঘটনা সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে প্রিন্ট মিডিয়ায় প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান করেছে ইনসাইড রিউমারস৷ ২০২২ সালের ২ অক্টোবর ‘প্রতিবেশী নারীর ঘরের চালের ড্রাম থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার’ শিরোনামে দৈনিক প্রথম আলো একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়,”বাকপ্রতিবন্ধী শিশুটিকে ‘পাগল’ বলে ডাকত সানজিদা জান্নাত নামের চার বছর বয়সের আরেকটি শিশু। এতে ক্ষুব্ধ ছিলেন প্রতিবন্ধী শিশুটির মা আঞ্জুয়ারা বেগম (৪০)। সানজিদাকে আপেল দেওয়ার কথা বলে আঞ্জুয়ারা তাকে বসতঘরের ভেতরে ডেকে নিয়ে যান। রাত ১১টার দিকে আঞ্জুয়ারার ঘরের চালের ড্রাম থেকে সানজিদার লাশ উদ্ধার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।”
সুতরাং, সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে বিএনপি নেতাকে জড়িয়ে করা দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷ বরং, এটি ২০২২ সালের ২ অক্টোবর যশোরের একটি ভিন্ন ঘটনার ভিডিও৷