মূলধারার গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ী থানায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলার আসামি হিসেবে গত ২৪ আগস্ট বরিশাল মহানগরের বাংলাবাজার এলাকায় বিশেষ অভিযান চালিয়ে কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে গ্রেপ্তার করেছে সিআইডি।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি প্রচার করা হচ্ছে যে, “কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে জেলে নেওয়ার ২৪ ঘন্টার ভেতরে ভারত থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে জেল থেকে মুক্তি পেল তৌহিদ আফ্রিদি।”
এই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে ভিডিও রয়েছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে৷ এর মধ্যে একটি ভিডিও দেখেছে সাড়ে ৪ লাখ মানুষ, শেয়ার হয়েছে ২০৪ বার৷
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধানে জানা যায়, তৌহিদ আফ্রিদি মুক্তি পাননি। তিনি এখনো কারাগারে আটক আছেন। প্রকৃতপক্ষে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে তৈরি ছবির সমন্বয়ে ভুয়া সংবাদ ভিডিও তৈরি করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করেছে ইনসাইড রিউমারস৷ ভিডিওর শুরুতে এক সংবাদ উপস্থাপিকাকে বলতে শোনা যায়, “কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদিকে জেলে নেওয়ার ২৪ ঘন্টার ভেতরে ভারত থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে জেল থেকে মুক্তি পেল তৌহিদ আফ্রিদি।”
ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, ভিডিওর শুরুর ৮ সেকেন্ডে উপস্থাপিকার পেছনের ব্যাকগ্রাউন্ডে মূলধারার ইলেকট্রনিক গণমাধ্যম ‘DBC সংবাদ’ লেখা দেখতে পাওয়া যায়। এর সূত্র ধরে গত ২০ আগস্ট ডিবিসি নিউজের “DBC News Daily” ফেসবুক পাতায় “ভারতে আ.লীগের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অবগত নয় দিল্লি” শিরোনামে প্রকাশিত একই উপস্থাপিকার একটি ভিডিও প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
সংবাদটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত প্রথমাংশের তুলনা করলে অডিও ছাড়া সবকিছুর হুবহু মিল পাওয়া যায়।
ডিবিসি নিউজের আসল ভিডিওতে বলা হয়, “ভারতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিয়ে বাংলাদেশ অন্তর্বর্তী সরকারের বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছে দিল্লি, বুধবার (২০ আগস্ট) দিল্লিতে বাংলাদেশ সরকারের বিবৃতির জবাবে দেশটির সরকারের মুখপাত্র রণধীর জশওয়াল বলেন ভারত এ ধরনের কোন কার্যক্রম সম্পর্কে অবগত নয়..।”
ভিডিওটিতে তৌহিদ আফ্রিদিকে নিয়ে কিছু বলা হয়নি। এমনকি অডিওর সঙ্গে উপস্থাপিকার কথার অসংলগ্নতা দেখা যায়, যা সাধারণত এআই দিয়ে তৈরি কনটেন্টের ক্ষেত্রে দেখা যায়৷ মূলত, এআই দিয়ে তৈরি ভুয়া অডিও এতে জুড়ে দেওয়া হয়েছে৷
ভিডিওর ৯ থেকে ২৯ সেকেন্ডের দৃশ্যে সাংবাদিকদের সাথে আরেক ব্যক্তিকে কথা বলতে দেখা যায় যিনি বলেন, “বিজ্ঞ আদালতে তৌহিদ আফ্রিদির রিমান্ড বাতিল ও জামিন চাওয়া হয়েছে।” ভিডিওটিতে তাকে তৌহিদ আফ্রিদির শারীরিক অসুস্থতার বিষয়ে উল্লেখ করতে দেখা যায়। উক্ত ভিডিওটির ডানদিকের ওপরের অংশে ‘ডিজিটাল খবর’ নামক একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের লোগো দেখতে পাওয়া যায়।
এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গত ২৬ আগস্টে ডিজিটাল খবরের ফেসবুক পাতায় প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত ফুটেজের হুবহু মিল পাওয়া যায়। কিন্তু এতেও কোথাও তৌহিদ আফ্রিদি জামিন পেয়েছেন এমনটা বলা হয়নি।
আরও নিশ্চিত হতে মূলধারার গণমাধ্যমের সংবাদ প্রতিবেদনের সন্ধান করেছে ইনসাইড রিউমারস। তবে আলোচিত দাবির স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি৷
সুতরাং, ভারত থেকে শেখ হাসিনার নির্দেশে জেলে নেওয়ার ২৪ ঘন্টার ভেতরে তৌহিদ আফ্রিদি মুক্তি পেয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা বলে নিশ্চিত হয়েছে ইনসাইড রিউমারস।