রাজধানীর বিজয়নগরে জাতীয় পার্টির (জাপা) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের ওপর হামলার ঘটনায় তিনি মারাত্মকভাবে আহত হয়ে বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি রয়েছেন।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তার মাথায় আঘাত লেগে রক্তক্ষরণ হয়েছে, পাশাপাশি নাক ও ডান চোয়ালের হাড় ভেঙে গেছে।
গণ অধিকার পরিষদের উপর সেনাবাহিনী আর পুলিশের হামলার সময় লাল টিশার্ট পরিহিত এক ব্যক্তি একজনকে উপর্যুপরি লাঠিপেটা করছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে দাবি করা হচ্ছে, “লাল টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তিটির পরিচয় জানে না কেউ! নুর ভাইকে মাটিতে পরে থাকার পরেও ও মেরে ফেলার জন্য মাথায় জোরে জোরে আঘাত করতে ছিলো।”
এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রায় পাঁচ হাজার বার দেখা হয়েছে এবং ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে প্রায় ১০০ বার।
এছাড়াও “Daily Morning 24” নামে একটি অনলাইনভিত্তিক সংবাদ প্ল্যাটফর্ম প্রচারিত হামলার ভিডিও থেকে নেওয়া ফ্রেম ব্যবহার করে “এতো ঘৃণা আর আক্রোশ নিয়ে কেন মারা হলো নুরুকে ? কি ছিল ইনটেনশন? জানাগেল চাঞ্চল্যকর তথ্য” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। একাধিক লাইভ ও ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে উক্ত ভিডিওতে লাল টিশার্ট পরিহিত ব্যক্তির হাতে মারধরের শিকার হওয়া ব্যক্তিটি যে নুরুল হক নুর নন সেটা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
আলোচিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে “GEN-G-GOP” নামের ফেসবুক পাতায় একটি ভিডিও পাওয়া যায়।
এই ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওর মিল পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিও ক্যাপশনে দাবি করা হয়, “খয়েরী গেঞ্জি পরা এক লোক আরেকজনের মাথায় বেদম মারার যে ভিডিওটা অনলাইনে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সেটা ভিপি নূরকে মারার ভিডিও না। আর্মি এবং পুলিশকে দায় মুক্তি দেওয়ার জন্য এই কাজ করা হয়েছে।”
পোস্টে দাবি করা হয়, “ঢাকা পোস্টের সাংবাদিক বুলবুল হাসানের করা এই ভিডিওতে পরিস্কার দেখা যাচ্ছে আর্মি ও পুলিশের নির্মম পেটানোর কারনেই ভিপি নূরের এই মুমূর্ষু অবস্থা।”
এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খানের ভেরিফায়েড ফেসবুক পাতায় একাধিক পোস্ট পাওয়া যায়। এক পোষ্টে রাশেদ খান জানান, “লাল শার্টপড়া ব্যক্তি যাকে পিটাচ্ছে সে নুরুল হক নুর নয়, সে ছাত্রনেতা সম্রাট।”
তিনি দাবি করেন, “লাল শার্ট পড়া ব্যক্তির উপর দায় চাপিয়ে নুরুল হক নুরসহ নেতাকর্মীদের উপর হামলার বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। সেনাবাহিনীর যারা নুরুল হক নুরের উপর হামলা করেছে, তাদের অবশ্যই শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এমনকি আমাদের কার্যালয়ে ঢুকে ও বাথরুম ভেঙে অসংখ্য নেতাকর্মীদের রক্তাক্ত করেছে সেনাবাহিনী।”
অপর এক পোষ্টে তিনি বলেন, “লালশার্ট পরিহিত ব্যক্তি পুলিশের কনস্টেবল। তার নাম মিজানুর রহমান। বিপি নং – ৯৭১৭১৯৭২৪৩ সে ছাত্রনেতা সম্রাটের উপর হামলা করেছে।”
এছাড়া Global TV Bangladesh এর ফেসবুক পাতাতেও “লাল শার্ট পড়া ব্যক্তি সমন্ধে যা বললেন রাশেদ খান” শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে দৈনিক মানবজমিনের ওয়েবসাইটে “লাল টিশার্ট পরিহিত সেই ব্যক্তি পুলিশের কনস্টেবল মিজানুর রহমান” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। প্রতিবেদনে যুক্ত ছবির সাথে ভিডিওতে থাকা মানুষজন সহ আশেপাশের দৃশ্যের সাদৃশ্য রয়েছে।
উক্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, “গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত লাল রঙের টি-শার্ট পরিহিত যুবক ডিবির কেউ নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হলেন মো. শফিকুল ইসলাম।”
আরও অনুসন্ধানে দৈনিক কালবেলার “জানা গেল লাল টিশার্ট পড়া সেই যুবকের পরিচয়” এবং বার্তা২৪ এর “পরিচয় মিলেছে লাল টি-শার্টের ব্যক্তির” শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, লাল টিশার্ট পড়া ব্যক্তি যাকে লাঠিপেটা করছিলেন, তিনি নুরুল হক নুর নন; বরং তিনি ছাত্রনেতা সম্রাট। আর সেই দৃশ্যই ভিপি নুরের উপর হামলা বলে প্রচার করা হচ্ছে, যা সঠিক নয়।