সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সম্প্রতি এক মোটরবাইক চালকের হাতে এক নারী শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানির ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। ভিডিওটি শেয়ার করে অন্তবর্তীকালীন সরকারের সময়ে নারীদের নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই।
ভিডিওটিতে দাবি করা হচ্ছে, “এই ঘটনার সমাধান যদি জিজ্ঞেস করেন তাহলে বেশিরভাগ মানুষ নারীদের ঘরের বাইরে বের হওয়াকেই কারণ হিসেবে দেখাবে। তখন নারীদের ঘরের মহারাণী করে রাখার যে সম্মান সেটা বয়ান করবে।” (বানান অপরিবর্তিত)
এই দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও প্রায় ৫ লাখের বেশি দেখা হয়েছে এবং ভিডিওটি নয়শো’র বেশি শেয়ার এবং এতে প্রায় একশো প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়াও প্রচারিত ভিডিওর ছবি ব্যবহার করে দৈনিক কালের কণ্ঠ পত্রিকায় “সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়া গলিপথের অসভ্যতা” শিরোনামে একটি মতামতও প্রকাশ করা হয়।
মতামতে আলোচিত ভিডিওর কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, “আমাদের সমাজে বিচারহীনতার যে সংস্কৃতি বছরের পর বছর ধরে গড়ে উঠেছে, এই দৃশ্য তার নগ্ন ও নির্মম প্রমাণ।”
কালের কণ্ঠে প্রচারিত ছবি শেয়ার করে একজন এক্স ব্যবহারকারী লিখেছেন, “দেশের কোথাও শান্তি নেই, নেই কোন নিশ্চয়তা। অসুর দুর্বৃত্ত ইউনূসের কবলে দেশ। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের জীবন বিপর্যস্ত। বোরকা পরিহিত একজন ছাত্রী রাস্তার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে এরই মধ্যে একজন মটর বাইক চালিয়ে এসে তার স্পর্শকাতার স্থানে স্পর্শ করে নির্দ্বিধায় বীরদর্পে চলে যায়। এটি হল নারীদের প্রতি মৌলবাদীদের পরিকল্পিত ভয় দেখানো বা নির্যাতন…”
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। ভিডিওর বিষয়ে প্রাসঙ্গিক একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে জানা যায় ঘটনাটি আসলে পাকিস্তানের।
অনুসন্ধানের শুরুতে “KhabarNaamaa” নামের একটি ফেসবুক পাতায় ২৩ আগস্ট ৬ সেকেন্ডের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে ফেসবুকে আলোচিত দাবিতে ছড়ানো ভিডিওটির হুবহু মিল পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, “সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে মুলতানে নারী শিক্ষার্থীকে হয়রানির অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।”
এছাড়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স ও ইউটিউবেও গত ২৩ আগস্ট একই ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়।
বিষয়টি নিয়ে অধিকতর অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম “DAWN”-এ গত ২৪ আগস্ট “Biker held for harassing girl” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, “মুলতানের হারাম গেট এলাকায় দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে বাইকে আসা এক ব্যক্তি হয়রানি করে। ঘটনাটি সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে এবং সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করেছে।”
সার্বিক দিক পর্যালোচনা করে এটি স্পষ্ট যে, আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়; বরং এটি পাকিস্তানের মুলতান শহরের ঘটনা।