আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ থাকতে হবে জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এবং জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত উপ-প্রতিনিধি ট্যামি ব্রুসকে জড়িয়ে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
ভিডিও’র ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে, “মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান উপমুখপাত্র ট্যামি ব্রুস নিশ্চিত করেছেন যে, আগামী জাতীয় নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে হবে, এবং সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকতে হবে। যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এটা করতে ব্যর্থ হয় তাহলে, এ অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সেনাবাহিনীর উপর নিষেধাজ্ঞা ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্য পদ বাতিল করা হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের সাংবিধানিক নিয়মে নির্বাচিত আওয়ামী সরকারের প্রত্যাবর্তনের সবধরনের পদক্ষেপ নিবে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক।” (বানান অপরিবর্তিত)
এই সংক্রান্ত দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট রয়েছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)। এর মধ্যে একটি ভিডিও দেখেছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার মানুষ, শেয়ার হয়েছে ১৬৫ বার।
তবে ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্যামি ব্রুস এরকম কোনো মন্তব্য করেননি। এমনকি নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে বলেও কোনো মন্তব্য করেননি। প্রকৃতপক্ষে, এটি গত ২০ জুন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুসের ভিন্ন ঘটনার একটি প্রেস ব্রিফিংয়ের খণ্ডিত অংশ।
অনুসন্ধানের শুরুতে রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে গত ২০ জুন প্রকাশিত একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর ২৮ মিনিট ৫ সেকেন্ড থেকে ২৮ মিনিট ৪৬ সেকেন্ড পর্যন্ত দৃশ্যের সঙ্গে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর দৃশ্যের হুবহু মিল রয়েছে।
এর আগে উক্ত ভিডিওর ২৭ মিনিট ৩৯ সেকেন্ড হতে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে আলোচনা শুনতে পাওয়া যায়। এসময় উপস্থিত একজন ট্যামি ব্রুসকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেন। প্রশ্নে বলা হয়, “জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান ভলকার তুর্ক বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ অভিযোগ করেছে যে ইউনুস নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার স্বেচ্ছাচারীভাবে আওয়ামী লীগ সমর্থকদের টার্গেট করছে। যুক্তরাষ্ট্র কি এটিকে গণতান্ত্রিক নীতির লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচনা করে এবং এসব কার্যক্রমের নিন্দা জানায়?”
জবাবে ট্যামি ব্রুস বলেন, “অবশ্যই, যখন অন্য কোনো দেশে যা ঘটছে তার প্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসের প্রতিক্রিয়ার কথা আসে — সেক্ষেত্রে আমি পরামর্শ দেবো যে আপনি হোয়াইট হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তবে স্টেট ডিপার্টমেন্টের অবস্থানের ক্ষেত্রে বিষয়টি খতিয়ে দেখে আমরা আনুষ্ঠানিক উত্তর দেবো। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাপারে আমি যা বলতে পারি তা হলো, উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যান্ডাউ গতকাল — মানে বুধবার — বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন এবং জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রচেষ্টা নিয়ে আলোচনা করেছেন। তারা যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়েও আলোচনা করেছেন, যার মধ্যে বাণিজ্য ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ অন্তর্ভুক্ত। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
অর্থাৎ, ট্যামি ব্রুসের আলোচনা থেকে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় যে, বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে আওয়ামী লীগসহ সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন এবং নির্বাচন আয়োজনে সেনাবাহিনী ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যর্থ হলে সেনাবাহিনীর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে জানিয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
আরও নিশ্চিত হতে গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের সন্ধান করেছে ইনসাইড রিউমারস। তবে আলোচিত দাবির পক্ষে কোনো সংবাদ বা তথ্য পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র এবং জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের মনোনীত উপ-প্রতিনিধি ট্যামি ব্রুসকে জড়িয়ে প্রচারিত ভিডিওটি সম্পূর্ণ মিথ্যা৷