Home / মতামত / জাতীয় পার্টির জটিল রাজনীতি ও চৌদ্দশ জীবনের গল্প

জাতীয় পার্টির জটিল রাজনীতি ও চৌদ্দশ জীবনের গল্প

আওয়ামী লীগের পনের বছরের শাসনামলের নানা অপকর্ম ঢাকতে এবং একের পর এক কারচুপি, ভোটচুরি আর জালিয়াতির নির্বাচনকে লোক দেখানো বৈধতা দিতে অপ্রাণ চেষ্টা করেছে জাতীয় পার্টি৷ তারা কখনো কথিত বিরোধী দল হয়েছে, কখনো তাদের প্রার্থীরা নিজেদেরকে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনের মাঠে প্রচারণা চালিয়েছে৷

অথচ জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের চাইলে একজন বড় মাপের রাজনীতিবিদে পরিনত হতে পারতেন যদি শেখ হাসিনার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে সত্যিকারের প্রতিবাদ করতেন৷ তিনি সেটা করেননি৷ বরং তিনি এবং তার দলের সদস্যরা শুধু আওয়ামী লীগের সঙ্গে থেকে নিজেদের প্রভাব, প্রতিপত্তি আর সম্পত্তি বাড়িয়েছেন৷ গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সুশাসন কিছুই তাদের কাছে গুরুত্ব পায়নি৷

শেখ হাসিনার দেশত্যাগের একবছর পর সেই জাতীয় পার্টি এখন বিএনপির ঘাড়ে উঠতে চাচ্ছে৷ মাঝখান থেকে যে একটি গণঅভ্যুত্থান হয়ে গেলো এবং তাতে অন্তত চৌদ্দশ তাজাপ্রাণের বলিদান হলো তা নিয়ে দলটির মাথাব্যথা নেই৷ বরং রাজনীতিতে সংস্কারের বদলে অতীতের নোংরামিতেই আস্থা তাদের৷

জাতীয় পার্টি এক সরল হিসেব নিয়ে বিএনপির কাছে যেতে চায়৷ হিসেবটি হচ্ছে আগামী নির্বাচনে যদি এনসিপি, জামায়াত ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন’ বা অন্য কোনো ইস্যুতে বর্জন করতে চায় তাহলেও যেন নির্বাচনটা লোক দেখানো হলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয় সেটার একটা পথ খোলা রাখা৷ অর্থাৎ সেই পুরনো কৌশলে জাতীয় পার্টি পরগাছার মতো বিএনপির সঙ্গে ঝুলবে৷ আগে যেভাবে ঝুলতো আওয়ামী লীগের সঙ্গে৷

এই ঝোলাঝুলির খেলায় কেউ কেউ এটাও ভাবতে শুরু করেছেন যে এভাবে নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা জাতীয় পার্টির মাধ্যমে নির্বাচনেও অংশ নিতে পারবে৷ তাদের যত দুশ্চিন্তা আওয়ামী লীগের ভোটাররা কোথায় ভোট দেবেন তাই নিয়ে৷ ভাবটা এমন এক বিশাল সংখ্যক জনগোষ্ঠী আওয়ামী লীগকে ভোট দিতে বসে আছে৷ অথচ ভোটারদের উপর আস্থাহীনতার তীব্র বহিঃপ্রকাশ শেখ হাসিনা নিজেই দেখিয়েছেন গত ১৫ বছরে৷ সাধারণ ভোটাররা যাতে মুক্তভাবে ভোট দিতে না পারেন তার সব আয়োজনই করেছেন তিনি৷ আর এখন সেই দলের ভোটারদের নিয়ে দুশ্চিন্তায় টকশো গরম করেন কেউ কেউ! বিচিত্র এক দেশের বাসিন্দ আমরা৷

যাইহোক, বাংলাদেশে রাজনীতিবিদদের মধ্যে নীতিনৈতিকতা এমনিতেই একটু কম৷ আর জাতীয় পার্টিরতো তা নেই সেটা বলাইবাহুল্য৷

এখন দেখার বিষয় হচ্ছে বিএনপি কতটা রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দেখাতে পারে৷ গত ১৫ বছর ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে ব্যাপকভাবে নিপীড়িত এই দলটি শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে গণঅভ্যুত্থানের কারণে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয়েছে৷ ১৫ বছরে শেখ হাসিনার পতন ঘটাতে পারেনি বিএনপি৷ কার্যত নেতৃত্বশূণ্য অবস্থায় কোনোক্রমে টিকে ছিল দলটি৷ এখন পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে সংস্কারের নানা উদ্যোগে তারাই বা হাত দিচ্ছে বেশি৷ এমনকি স্বৈরাচারের দোসর জাতীয় পার্টিকে নিষিদ্ধের প্রশ্নেও তারা একেবারেই নিরব৷

আগামী নির্বাচন ফেব্রুয়ারি মাসে হবে বলেই আমি মনে করি৷ আর তাতে অনেক দলই অংশ নেবে৷ কিন্তু বিএনপি যদি কিছুটা নীতিনৈতিকতাও সেই নির্বাচনের আগে দেখাতে না পারে তাহলে সেটা হবে গোটা জাতির জন্য হতাশার৷

Tagged: