গত ৩১ আগস্ট ভাড়া বাসার এক দারোয়ানকর্তৃক ছাত্রীকে মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় দুই শতাধিক মানুষ আহত হন। বর্তমানে জোবরা গ্রামসহ আশপাশের এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে।
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দাবি করা হচ্ছে, “চবিতে শিবিরের গুলিতে দশ বছর বয়সী শিশু ইফতি নিহত হয়েছে।”
এই দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে।
বাংলা ম্যাগাজিন, দিনপত্র নামক ফেসবুক পাতা এবং ওয়েবসাইট থেকেও একই দাবিকে সংবাদ হিসেবে প্রকাশ করা হয়।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্ট পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে দেশের মূলধারার কোনো বিশ্বস্ত গণমাধ্যমে উক্ত দাবির বিষয়ে কোনো সংবাদ কিংবা প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি।
বরং অধিকতর অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত দাবির শিশুটি আসলে বাংলাদেশের নয়, সে ভারতের মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা।
কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে চলতি বছরের ৪ আগস্ট ভারতীয় গণমাধ্যম এনডিটিভির ওয়েবসাইটে “Maharashtra Teen Jumps To Death From Hill As Mother Refuses To Buy Phone” শিরোনাম একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদনে ব্যবহার করা ছবির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা ছবির হুবহু মিল রয়েছে।
এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মহারাষ্ট্রের ছত্রপতি সাম্ভাজীনগর জেলার তিসগাঁও এলাকায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। আটার্ভা গোপাল তাইডে নামের ১৬ বছর বয়সী এক কিশোর বহুদিন ধরে মায়ের কাছে মোবাইল ফোন চাইছিল। কিন্তু তার মা অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কিশোরটি ৪ আগস্ট তিসগাঁওয়ের একটি পাহাড়ে উঠে সেখান থেকে ঝাঁপ দেয়।
স্থানীয় লোকজন দ্রুত তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তবে চিকিৎসকরা জানান, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই সে মারা গেছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, মোবাইল ফোন না পাওয়ার হতাশা থেকেই এই আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। এর আগে মহারাষ্ট্রে একই ধরনের আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে — যেখানে কিশোররা ব্যয়বহুল ফোন না পেয়ে চরম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে The Times of India সহ আরও কিছু ভারতীয় গণমাধ্যমে একই প্রতিবেদনে পাওয়া যায়। উক্ত গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন গুলোতে একই ছবি ও তথ্য পাওয়া গেছে।
সুতরাং, সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, যে শিশুটির ছবি ফটোকার্ড ও সংবাদ প্রতিবেদনে ব্যবহার করা হয়েছে সে আসলে বাংলাদেশের নয়, ভারতের মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা। অর্থাৎ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের গুলিতে শিশু নিহতের দাবিতে প্রচারিত সংবাদ ও পোস্ট সঠিক নয়।