Home / রাজনীতি / ২১ আগস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরনো ভিডিও প্রচার

২১ আগস্ট মামলার রায়কে কেন্দ্র করে যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিল দাবিতে ভিন্ন ঘটনার পুরনো ভিডিও প্রচার

৪ সেপ্টেম্বর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন। 

আর এই বিষয়কে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে “২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার, আসামিদের বেকসুর খালাস প্রদান করায়,, হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিল। সেই মিছিলে বাধা দেয় বিএনপি’র, তখনই সংঘর্ষে রূপ নেয়” (বানান অপরিবর্তিত) দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে।

এই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)

ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান 

শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও ভিডিও পর্যবেক্ষণ করে জানা যায়, উক্ত ভিডিওর দাবিটি সঠিক নয়। ভিডিওর কোথাও ২১ আগস্টের কথা উল্লেখ নেই।

আলোচিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে “দৈনিক কালবেলা” পত্রিকার ইউটিউব চ্যানেলে একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ২০২৩ সালের প্রচারিত “হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সং*ঘ*র্ষ” শিরোনামে পাওয়া এই ভিডিওর সঙ্গে আলোচিত ভিডিওর মিল রয়েছে।

এছাড়া ভারত ভিত্তিক আন্তর্জাতিক ইংরেজি গণমাধ্যম “WION” (World is One News) এর প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য পাওয়া যায়।

এর সূত্র ধরে অনুসন্ধানে “প্রথম আলোর” ওয়েবসাইটে “হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ, আহত শতাধিক” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। 

২০২৩ সালের ২০ আগস্ট প্রকাশিত সেই প্রতিবেদনে বলা হয়, “হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষের সময় জেলা বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পুলিশ।”

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বরাতে পত্রিকায় বলা হয়, “গতকাল শনিবার বিএনপি-পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে আজ বিকেলে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন জেলা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে শায়েস্তানগর এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ে গিয়ে হামলা চালায়। এ সময় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিএনপির নেতা-কর্মীদের টানানো ব্যানার-ফেস্টুন ছিঁড়তে থাকেন। তখন বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে এসে তাঁদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান। এ সময় উভয় পক্ষের মধ্যে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।”

বিষয়টি নিয়ে আরও অনুসন্ধানে দ্য ডেইলি স্টার, মানবজমিন, দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার পাওয়া প্রতিবেদনেও একই তথ্য পাওয়া যায়।

এদিকে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) প্রথম আলো, আজকের পত্রিকা, দেশ রুপান্তর সহ দেশের প্রথম সারির সকল গণমাধ্যমে‌ ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ আসামিদের খালাস দিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ– এমন সংবাদ প্রকাশ করলেও গণমাধ্যমের কোনো সূত্রেই প্রচারিত দাবির বিষয়ে কোনো তথ্য বা সংবাদ পাওয়া যায়নি।

সুতরাং সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার আসামিদের বেকসুর খালাস প্রদান করায় হবিগঞ্জ জেলা যুবলীগের বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে – এমন দাবি সঠিক নয়। বরং এটি ২০২৩ সালের ২০ আগস্ট হবিগঞ্জে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা।

Tagged: