সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে হাজীর বিরিয়ানিতে কুকুরের মাংস দাবিতে একটি ভিডিও প্রচার করা হচ্ছে। ভিডিওতে দাবি করা হয়, হাজীর বিরিয়ানিতে খাসির বদলে যে কুকুরের মাংস দেওয়া হয় তা হাতেনাতে ধরা পড়েছে।
এই দাবিতে ফেসবুকে পোস্ট আছে এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত একটি ভিডিও এই প্রতিবেদন প্রকাশ করার আগ পর্যন্ত প্রায় ৩০ লক্ষাধিক বার দেখা হয়েছে। পাশাপাশি ভিডিওটিতে ৩৭ হাজারের উপরে শেয়ার এবং ৩৪ হাজার প্রতিক্রিয়া দেখানো হয়েছে।
ইনসাইড রিউমারসের অনুসন্ধান
অনুসন্ধানের শুরুতেই আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করে ইনসাইড রিউমারস। ভিডিও পর্যবেক্ষণে আলোচিত দাবির স্বপক্ষে কোনো তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে, ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানে ৬ আগস্ট আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দাতব্য সংস্থা “Dog Fight meat” এর ফেসবুক পেইজে একটি ভিডিও খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওর সাথে আলোচিত ভিডিওটির হুবহু মিল খুঁজে পাওয়া যায়।
ভিডিওটির ক্যাপশন থেকে জানা যায়, ভিয়েতনামের ক্যা মৌ ও গিয়া রাই পুলিশের অভিযান চালিয়ে সায়গন থেকে কার্যক্রম চালানো একটি পেশাদার ও সশস্ত্র কুকুর চোরের দলকে গ্রেফতার করেছে। এক চোরের মোটরবাইকে ১২টি মৃত কুকুর পাওয়া যায়, যাদের মুখ বাঁধা ছিল। কুকুরগুলোকে প্রথমে গুলি এবং বিদ্যুৎ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ এখনও এই ঘটনার তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে।
এ নিয়ে ডগ ফাইট মিটে’র ইন্সটাগ্রাম পাতাতেও একই ভিডিও ও তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়।
পরবর্তীতে ভিডিওটির সূত্র ধরে কি-ওয়ার্ড সার্চ পদ্ধতির মাধ্যমে অনুসন্ধানে ভিয়েতনামের “Tuoitre” নামক একটি গণমাধ্যমে চলতি মাসের ৫ তারিখে “2 arrested in southern Vietnam for organized dog theft, 12 dogs found dead” শিরোনামে একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ভিয়েতনামের ক্যা মৌ প্রদেশের গিয়া রাই ওয়ার্ডে পুলিশ একটি কুকুর চোর চক্রকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারকৃতরা হলেন লাম হাই চুং (৩৭) এবং কুয়াচ ডুং বিন (৪৫), যারা ক্যা মৌ প্রদেশের বাসিন্দা। তাদের কাছ থেকে ১২টি মৃত কুকুর উদ্ধার করা হয়েছে, যাদের মুখ বাঁধা ছিল এবং তারা বৈদ্যুতিক শকের মাধ্যমে কুকুরগুলোকে হত্যা করেছে।
প্রতিবেদনে পুলিশের বরাতে আরও বলা হয়, এই চোর চক্রটি বেশ পেশাদার ও সশস্ত্র ছিল। তারা বাঁধা পেলেই আক্রমণের জন্য প্রস্তুত ছিল, এমনকি পুলিশের ওপরেও। তাদের গ্রেফতারের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক কিছুটা কমেছে।
অর্থাৎ ভিডিওটি ভিয়েতনামের এবং এটি ছিল কুকুর চোরদের ভিয়েতনাম পুলিশের কাছে ধরা পড়ার ভিডিও।
সুতরাং, সার্বিক পর্যবেক্ষণে এটি স্পষ্ট যে, প্রচারিত ভিডিওটির সাথে হাজীর বিরিয়ানির কোনোপ্রকার সংশ্লিষ্টতা নেই।